অগ্রমৈত্রী বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র

অগ্রমৈত্রী বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্রটি খাগড়াছড়ি জেলা সদরের মধ্যে তেতুলতলা এলাকায় অবস্থিত। ভাবনা কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৯ সালে। কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা করেন বিদর্শনাচার্য্য ্রীমৎ তেজবংশ স্থবিরভাবনা কেন্দ্রটি প্রায় দুই একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত। এখানে বিদর্শন ভাবনা প্রশিক্ষণ দেয়া হয় অত্যন্ত যত্ন সহকারে। ভাবনা কেন্দ্রটির অধ্যক্ষ শ্রদ্ধেয় তেজবংশ স্থবির স্বয়ং বিদর্শন ভাবনা প্রশিক্ষণের তদারকি করেন। 
প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসের দিকে ভাবনা কোর্স শুরু হয়। বিদর্শন ভাবনা কোর্স একটানা দশদিন। এসময় সাংসারিক সকল কাজ কর্ম ফেলে রেখে ভাবনায় অংশ গ্রহণকারীগণ ভাবনায় নিবিষ্ট হন। ভাবনা চলাকালীন দিনগুলোতে মোবাইল ব্যবহার, বইপড়া, আলাপ-চারিতা একদম বন্ধ। পুরো দশদিন মৌনব্রত পালন করে ভাবনায় মনোনিবেশ করতে হয়।
ভাবনাকারীগণের থাকার ব্যবস্থা ভাবনা কেন্দ্রের ভিতরে। মহিলা ভাবনাকারীদের জন্য আলাদা থাকা, গোছল এবং  টয়লেটের ব্যবস্থা রয়েছে। ভাবনা পরিচালনার জন্য একটি কমিটি করা হয়।
কিভাবে যাবেন: 
ঢাকা হতে - ঢাকা হতে  সরাসরি চেয়ার কোচে খাগড়াছড়ি নামবেন। ঢাকা কলাবাগান অথবা সায়েদাবাদ স্টেশন হতে শ্যামলী, এস আলম, ষ্টার লাইন ইত্যাদি বাসে খাগড়াছড়ি যাওয়া যায়।
চট্টগ্রাম হতে- চট্টগ্রামের আক্সিজেন স্টেশন হতে শান্তি স্পেশাল বিরতিহীনে চড়ে খাগড়াছড়ি যাওয়া যায়।
খাগড়াছড়ি বাজারে নেমে ইজি বাইকে চড়ে মধুপুর বাজার যাবেন। সেখান থেকে আবার ইজি বাইকে চড়ে তেতুল তলা অগমৈত্রী ভাবনা কেন্দ্রে যাবেন।

বিদর্শন ভাবনা অনুশাসন সহায়িকা

প্রস্তাবনা: পালি "বিপস্সনা" শব্দ থেকে বিদর্শন শব্দটি এসেছে। বিপস্সনা ভারতবর্ষের বহু প্রাচীন সাধনা পদ্ধতি। এ পদ্ধতি আড়াই হাজার বছর পূর্বে ভগবান গৌতম বুদ্ধ আবিষ্কার করেন।তিনি নিজেই এই পদ্ধতি অনূশীলন করে জ্ঞানের সবোর্চ্চ শিখরে উপনীত হয়েছেন এবং তা সর্বসাধারণের হিতার্থে প্রচার করে গেছেন। বিদর্শন শব্দের অর্থ বিশেষভাবে দর্শন, আত্ম নিরীক্ষণ বা আত্মসমীক্ষণ বুঝায়। ভাবনার গভীরে প্রবেশ করে কায় ও মনের অনুক্ষণ পরিবর্তনশীল অনুভূতিকে নির্লিপ্তচিত্তে দর্শন করাই বিদর্শন।

বিদর্শন ভাবনার উদ্দেশ্য: প্রত্যেক মানুষ রাগ-দ্বেষ-মোহ নামক অন্তর মালিন্যতার অধীন। যে মালিন্যতার কারণে মানুষ নিজেকে যেমন পাপ কার্যের দিকে নিয়ে যায় তেমনি অপরকেও। বিদর্শন ভাবনা হচ্ছে মনের এ সব ক্লেশ বা লোভ-হিংসা-ক্রুরতা ইত্যাদি হতে মুক্তি লাভ করা। রাগ-দ্বেষ-মোহের জটায় জটিত চিত্ত বিদর্শন ভাবনা দ্বারা নির্মল করা যায়। এছাড়াও এর মাধ্যমে শরীর এবং মনের নানাবিধ রোগ নিরাময় হয়। তবে মনে রাখতে হবে যে বিদর্শন ভাবনার উদ্দেশ্য রোগ নিরাময় নয়, বরং পারমার্থিক উন্নতি।

অনুশাসন: বিদর্শন ভাবনা কোর্স মোট দশদিন চলে। যিনি ভাবনা শিবিরে যোগ দেবেন তাকে টানা দশদিন থাকতে হবে। মাঝপথে বেরিয়ে যাওয়া নিয়ম বিরুদ্ধ। বিদর্শন সাধনা আয়ত্ব করার ক্ষেত্রে এ ক'দিন সময় খুবই কম। তাই সময়ের সদ্ব্যবহার নিতান্ত আবশ্যক। সাধনার সুফল লাভে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে যথা নিয়ম প্রতিপালন পূর্বক নিরন্তর একান্ত মনে সাধনা করে যাওয়া বিশেষ প্রয়োজন। ভাবনা কোর্সের দৈনন্দিন সময়সূচী বা নিয়মাবলী বহু সাধকের অনূভুতি ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বিজ্ঞান সম্মতভাবে প্রতিষ্ঠিত। তাই অনুশাসন সহায়িকায় প্রদত্ত নিয়ম-কানুন আগে মন দিয়ে পড়ে নিয়ে সেসব নিষ্ঠা সহকারে  পালন করতে প্রস্তুত থাকলে তবেই ভাবনা কোসে আবেদন করা উচিত।

নানাবিধ পূজা সাধনা বিধির সংমিশ্রণ: বুদ্ধপূজা, সীবলীপূজা, অর্হত পূজা, উপগুপ্ত পূজা, ধূপ, দীপ পূজা, গাথা পাঠ, জপ-তপ, ভজন-কীর্তন, সবকিছু ভাবনায় যোগ দেওয়ার সাথে সাথে ভাবনা কোর্স শেষ না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে। যদি বিদর্শন ভাবনার সাথে অন্য বিধির সংমিশ্রণ ঘটে তবে আসল উদ্দেশ্য নষ্ট হয়ে যাবে।

ভেতর বাহির সম্র্ক: ভাবনা কোর্সের মধ্যে সাধক-সাধিকাকে পুরো দশদিন কেন্দ্রের সীমানার ভিতরে থাকতে হবে। এ দশদিনের মধ্যে কোন রকম আলাপ-ফোনালাপ বা পত্রালাপ করা যাবে না। ভাবনাকারীর কোন আত্মীয় বা অভিভাবক কোন প্রয়োজনে কেন্দ্রে আসলে তাকে ব্যবস্থাপকের সঙ্গে দেখা করতে হবে, সাধক-সাধিকার সঙ্গে নয়। 

অসুখ-বিসুখ: ভাবনা করাকালীন মাথা ধরা, বমি ভাব, প্রচন্ড ব্যথা, শারিরীক-মানসিক অশান্তি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারেএ  সময কোন রকম ঔষধ সেবন নিয়ম বিরুদ্ধ। কারোর কোন রোগ ব্যাধি থাকলে তা ভাবনা কোর্সের প্রথম দিনে ভাবনা করার আগে আচার্যকে অবহিত করতে হবে।

আবাসন: স্ত্রী-পুরুষ একসাথে থাকা নিয়মবিরুদ্ধ। আহার, বিহার, সাধন-শয়ন যে কোন সময় কোন রকম যোগাযোগ অবিধেয়। এমনকি ইশারা-ঈঙ্গিতেও।

মৌনতাবলম্বন: ভাবনা শুরুর প্রথম দিন থেকে দশম দিন সকাল ৮টা পর্যন্ত মৌন থাকতে হবে। অর্থাৎ মৌখিক বা লিখিত বাক্যালাপ এমনকি ইশারা-ঈঙ্গিতেও ভাব বিনিময় করা যাবেনা। অত্যন্ত জরুরী কোন প্রয়োজন হলে ব্যবস্থাপককে স্বল্প কথায় জানাতে পারবেন। তবে তা অন্যান্য সাধক-সাধিকার ক্ষতি না হয় মত উচ্চস্বরে যেন না হয়। ভাবনা সম্পর্কিত কোন প্রশ্ন থাকলে যথা সময়ে তা জিজ্ঞাসা করবেন। ভাবনায় সাফল্য নির্ভর করবে প্রত্যক ব্যক্তির নিজস্ব প্রয়াসের উপর, অতএব বহুজনের মাঝে থেকেও  একাকী, আত্মস্থ হয়ে নিয়ম অনুসরণ করাই বিধেয়।  

পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা: দৈনিক একবার স্নানই একজন ভাবনাকারীর জন্য যথেষ্ট। দেহের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি নিজের ব্যবহার্য রুম, স্নানঘর, টয়লেট সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। বেশ-ভূষার ক্ষেত্রে দেহের শুচিতা, পোষাকের শালিনতা ও পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে, মেয়েদের ক্ষেত্রে স্বচ্ছ(জাল বিশেষ), ফিনফিনে পাতলা বস্ত্র পরিত্যাজ্য। সালোয়ার কামিজের সঙ্গে দোপাট্টা রাখা বিধেয়।

আহার: ভাবনা কোর্সে দৈনিক দুবেলা আহার দুবেলা পানীয় ভাবনাকারীদের জন্য পরিবেশন করা হয়। সকাল ৬টায় যাগু, দুপুর ১১টায় ভাত, বিকাল ৪টায় এবং রাত ৮টায় পানীয় ব্যবস্থা থাকে। কোন রুগ্ন সাধকের চিকিৎসকের পরামর্শে অন্যকিছু পথ্যের প্রয়োজন হলে তা আবেদনপত্রে উল্লেখ করবেন অথবা ব্যবস্থাপককে জানাবেন, পরবর্তীতে তা ব্যবস্থা করা হবে কিনা কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করবে। 

অন্যান্য প্রতিপাল্য বিধি:

*মোবাইল ফোন, ক্যামেরা, রেডিও, টিভি ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে না । ঐসব জিনিস কেন্দ্রে আনলে তা দশ দিসের জন্য অফিসে জমা দিতে হবে।

*যে কোন ধরনের বই, সংবাদপত্র পড়া এবং লেখলেখি দশদিনের জন্য বন্ধ রাখতে হবে।

*যে কোন অলংকারপাতি বা দামী জিনিস ভাবনা শিবিরে না আনাই ভাল। আনলেও তা অফিসে জমা দিতে হবে।

*পান, বিড়ি, সিগারেট,জর্দা, নস্যি ইত্যাদি নেশাদ্রব্য শিবিরে আনা ও ব্যবহার করা অবিধেয়।

*ভাবনা কোর্সে আসার সময নিজের ব্যবহার্য্য জিনিস- ব্রাশ, টুথ পেস্ট, টর্চলাইট, লেপ, তোষক ইত্যাদি সঙ্গে আনতে হবে। মশারি বালিশ কেন্দ্র হতে সরবরাহ করা যাবে।

*বিদেশী সাধক/সাধিকা পাসপোর্ট ভিসা সঙ্গে আনবেন।

*কোন ঘড়ি ব্যবহার অবিধেয়।

আচার্যের সাক্ষাতকার: ভাবনা বিষয়ে বা অন্য কোন বিষয়ে সমস্যা দেখা দিলে চংক্রমনের সময় আচার্যকে বলা যাবে এবং রাত্রে ১০.০০টা হতে ১০.৩০টা পর্যন্ত উদ্ভুত সমস্যা সমাধানের নির্ধারিত সময়ে বলা যাবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আলোচনা তা কোন তাত্ত্বিক বা দার্শনিক বিষয় চর্চার জন্য নয়, কেবল ভাবনার সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনা। ভাবনা কোর্স শেষে তুলনামূলক চর্চা করার অবকাশ যথেষ্ট পাবেন।

শীল পালন: বিদর্শন সাধনায় আত্মনিয়োগ করার আগে প্রত্যক উপাসক-উপাসিকাকে অষ্টশীল পালন করতে হবে। অষ্টশীল হচ্ছে আটটি নিয়ম। যথা-

১.প্রাণীহত্যা না করা।

২.চুরি নাকরা।

৩.অব্রহ্মচর্য আচরন না করা।

৪.মিথ্যা কথা না বলা।

৫.নেশা সেবন না করা

৬.দ্বিপ্রহরের পর আহার না করা।

৭.নাচ  ও গান বাজনা  না করা এবং নানাবিধ অলংকার , প্রসাধনী ব্যবহার না করা।

৮.বিলাসী শয্যা ব্যবহার না করা।

*ভিক্ষু বা শ্রমণ হলে যে কোন ধরণের টাকা-পয়সা বা স্বর্ণ রৌপ্য গ্রহণ না করা এতে সংযুক্ত।

*ভিক্ষু হলে তাকে অবশ্যই আপত্তি দেশনা করতে হবে এবং পাতিমোক্ষ শীলে প্রতিষ্ঠিত থাকতে হবে।

আচার-আচরণ: প্রত্যেকের আচার আচরণ ভাল হওয়া চাই। নিজের চলাফেরায় যাতে অন্যের ক্ষতি না হয় সেদিকে র্বদা খেয়াল রাখতে হবে। কেউ কারোর সাথে ঝগড়া বিবাদ করতে পারবেন না।কারোর গর্হিত আচরণে উত্তেজিত হবেন না, নিজেকে বশে রেখে একান্ত মনে ধ্যান চালিয়ে যাবেন।

ব্যয় সংক্রান্ত কথা: ভাবনা কোর্স পরিচালনার ব্যয় ভাবনাকারী  এবং দায়কদায়িকাদের  স্বেচ্ছাদানের উপর নির্ভর করে। ভাবনা কোর্স সমাপ্ত হলে আপনারাও পরবর্তী ভাবনা কোর্স পরিচালনার সহায়তার জন্য সাধ্যমত দান করে যেতে পারেন। আপনাদের নি:স্বার্থ দান কেন্দ্র নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ কাজে ব্যয় হয়ে থাকে।

শেষকথা: পূর্বেই বলা হয়েছে বিদর্শন ভাবনার মূল উদ্দেশ্য পারমার্থিক উন্নতি বা আধ্যাত্মিক বিকাশ। যে কোন জন নাম-যশ-খ্যাতি লাভের আশায় দান করা বা ভাবনা করা উচিত নয়। প্রকৃত ভাবনাকারী পরিবারের ও সমাজের সুখী সদস্য হিসেবে বসবাস করতে পারবেন এবং নি:স্বার্থ দাতা ত্যাগের মাঝে বিপুল সুখ লাভ করতে পারবেন। অগ্রমৈত্রী বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্রের পক্ষ থেকে আপনাকে সহায়তা করতে আমরা সদা প্রস্তুত।

আপনার সাধনার সাফল্য  কামনা করছি।

যোগাযোগ:

ময়মন চাকমা

মেবাইল-০১৫৫৩৭৯০৫৭৯, ০১৮২৬৫৯৪১০৫.

 

ভাবনায় ফল লাভের উপায়

চিত্তের একাগ্রতা আনার এবং জ্ঞান লাভের একমাত্র উপায় হচ্ছে ভাবনা, ভাবনা ছাড়া চিত্তের একাগ্রতা আসে না এবং একাগ্রতা ছাড়া বিদর্শন লাভ হয় না। লৌকিক ও লৌকত্তর হিসেবে ভাবনাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথাঃ
১। শমথ ভাবনা(লৌকিয় সাধনা)
২। বিদর্শন ভাবনা (লোকত্তর সাধনা)
শমথ ভাবনার দ্বারা ক্লেশ উপশম হয় ও চিত্তের একাগ্রতা আসে এবং বিদর্শন ভাবনার দ্বারা অজ্ঞান ধ্বংস হয় এবং ক্লেশ নিবৃতি ঘটে। ভাবনা করতে হলে ভাবনাকারীর প্রাথমিক কয়েকটি বিষয় বিশেষভাবে প্রয়োজনঃ-
ভাবনাকারীকে নিজের চরিত্র অনুযায়ী উপযুক্ত গুরুর কাছ থেকে ভাবনার বিষয় ভালভাবে জেনে নিতে হবে। বিষয় নির্বাচিত হয়ে গেলে সে বিষয়ের উপর শিক্ষা, অভ্যাস, আচরণ ধারণ ও পুরণ করার জন্য দৃঢ়তার সাথে চেষ্টা করতে হবে। ভাবনার সময় অন্য সকল চিন্তা মন থেকে দূরীভূত করে সে বিষয়ের উপর মনকে ডুবে রাখার জন্য বারংবার চেষ্টা করতে হবে। যে বিষয়ের উপর ভাবনা করা হয় সেই বিষয় বাদে যদি অন্য বিষয় নিয়ে মন ডুবে থাকে তাহলে বুঝতে হবে প্রকৃত ভাবনা হচ্ছে না। নিম্নে শ্রদ্ধেয় বনভান্তের ভাবনা বিষয়ক দেশনা এবং ধর্ম্মীয় শাস্ত্রের বিভিন্ন উপদেশ হতে শমথ ভাবনা ও বিদর্শন ভাবনার কয়েকটি বিষয় সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হলো।

শমথ ভাবনাঃ
১। কামাসক্তি পরিত্যাগের জন্য ৩২ প্রকার অশুচি ভাবনা করা। এ ভাবনার দ্বারা নাম-রূপের(কায়ের) প্রতি লোভ উপশম হয়।
২। ক্রোধ হিংসা পরত্যাগের জন্য চারি ব্রহ্মবিহার ভাবনা করা।
ক) মৈত্রী ভাবনা-বিশ্বের সকল প্রাণীর সুখ কামনা করা।
খ) করুণা ভাবনা- বিশ্বের সকল প্রাণীর প্রতি দয়া প্রদর্শন করা।
গ) মুদিতা ভাবনা- অপরের সুখ, সৌভাগ্য দর্শনে সুখ অনুভব করা তথা মঙ্গল কামনা করা।
ঘ) উপেক্ষা ভাবনা- শত্রুর প্রতি হিংসা না করার ভাবনা।
৩। চিত্তের বিতর্ক পরিত্যাগের জন্য আনাপান স্মৃতি বা শ্বাস-প্রশ্বাস ভাবনা করা। বিতর্ক তিন প্রকারঃ
ক) কাম বিতর্ক-পুরূষ যদি নারীর অথবা নারী যদি পুরুষের রূপ লাবণ্যে ও স্পর্শে সুখকামনা উদ্রেক করে তা চিত্তের কাম প্রবৃত্তি।
খ) হিংসা বিতর্ক- শত্রুকে মারার, হত্যা করার প্রবৃ্ত্তি।
গ) রাগ বিতর্ক- তাকে কষ্ট দিব, দুঃখ দিব ইত্যাদি চিন্তা।
৪। আমিত্ব বা অহংকারাদি পরিত্যাগের জন্য পঞ্চস্কন্ধের (রূপ, বেদনা, সংজ্ঞা, সংষ্কার, বিজ্ঞানস্কন্ধ) অনিত্য ভাবনা করা। অহরহ ক্ষয় হচ্ছে বলে অনিত্য।


আত্মা ও অনাত্মাবাদ

লেখক: বিশুদ্ধানন্দ মহাস্থবির
বইয়ের নাম: সত্য দর্শন
আমরা বলি, আমার শরীর, আমার জ্ঞান-ধ্যান, আমি সুখ-দু:খ অনুভব করি, আমি দেখি-শুনি, আমার দ্বারা ঘ্রাণন-স্বাদন-দর্শন-স্পর্শন কারয্য সমাপাদিত হয়। চিরাগত প্রশ্ন হইতেছে,- এই শরীরের অধিকারী কে? এই যে তথাকথিত আমি সে কে?

প্রাচীন কাল হইতেই দার্শনিকগণ এই সব প্রশ্নের বিচার করিয়া আসিতেছেন, এই আমি কে?প্রশ্ন খুব সহজ, উত্তরও সরল বলিয়াই আমাদের ধারণা। আমরা মনেকরি আমার শরীর, আমার চক্ষু-কর্ণাদি বলিতে এখানে না বুঝিবার কি আছে? কিন্তু আসলে তাহা নহে। প্রশ্নটি স্বভাব-গম্ভীর। এইজন্য দার্শনিকগণ বিভিন্ন মত পোষণ করিয়াছেন ও ভিন্ন ভিন্ন উত্তর দিয়াছেন।

কেহ কেহ বলেন-  ব্যক্তির পশ্চাতে এমন এক সত্তা আছে, যিনি শরীরের কর্ত্তা, জ্ঞানের জ্ঞাতা, সুখ-দু:খের ভোক্তা, দ্রষ্টা, ঘ্রাতা, স্বাদেতা, স্পর্শেতা, ইনিই হইতেছেন আমাদের আত্মা। কেহ বলিয়াছেন পুরুষ, কেহ বলিয়াছেন জীব। কিন্তু এই শ্রেণীর ভিন্নতায় কিছু আসিয়া যায় না। সকলে একটি কিছু লক্ষ্য করিয়াছেন, ইহা একান্ত সত্য। এই আত্মাই শরীর ও মনের পরিচালক। জানন, ভোজন, দর্শন, স্পর্শন,ধারণ গমনাদি জ্ঞান ও কর্ম্মেন্দ্রিয় গ্রামের সাহায্যেই তিনি সম্পাদন করিয়া থাকেন। আত্মা, মন ও শরীরের পরে।মন ও শরীরের তিনি একমাত্র কর্ত্তা ও সর্বেসব্বা।

এই মতবাদে আজও পৃথিবীর বহু বিজ্ঞাবিজ্ঞ লোক প্রতিষ্ঠিত। তথাগত  বুদ্ধ্বই সর্ব্ব প্রথম এই মতবাদ প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি অনাত্মাবাদী, সন্ততিবাদী। একদা পৃথিবী এই অনাত্মবাদকে শ্রদ্ধাবনত মস্তকে গ্রহণ করিয়াছিল। আজও অনাত্মবাদীর সংখ্যা তুল্য তুল্য বলিতে হইবে।

জাতিস্মর জ্ঞান ও সংক্রমণ স্বীকার না করিয়া আপাতত: কিরূপে পারা যায়? কিন্তু আত্মার(বিজ্ঞানের) ভিন্ন দেহ সংক্রান্তি অস্বীকার করিয়া তথাগত সাতি নামক ভিক্ষুকে তিরষ্কার করিয়াছিলেন। তাঁহার মত এই য়ে,- বিজ্ঞান তথাকথিত আত্মা ও প্রতীত্য সমুতপন্ন ধর্ম্ম। প্রত্যয় ভিন্ন বিজ্ঞানের  উতপত্তি অসম্ভব। বহু জলানুর স্রোতরূপে প্রবাহমান সন্ততিকে যেমন আমরা নদী বলি, বহু বিজ্ঞানের সন্ততিকে তেমনই আত্মারূপে সাধারণভাবে আমরা গ্রহণ করিয়াছি। জলানুর স্রোতই সত্য, নদী ব্যবহার মাত্র। আত্মাও ব্যবহার মাত্র, বিজ্ঞান সন্ততিই সত্য। যাজ্ঞবল্ক্য আত্মাকে ইহ পর জন্মের সেতু রূপে বর্ণনা করিয়াছেন, কিন্তু তথাগত কর্ম্মকেই সেতুরূপে স্থাপন করিয়াছেন। দীপ্ত দীপ হইতে, অন্য অদীপ্ত দীপ দীপ্ত করিলে যেমন পূর্ব্ব দীপ্তির সংক্রমন হয় না, অথবা গুরু হইতে ছাত্র মন্ত্র শিক্ষা করিলে, যেমন গুরু মন্ত্রহীন হন না, তদ্রুপ আত্মার (বিজ্ঞানের) সংক্রান্তি না হইলেও সংষ্কার-প্রত্যয় লাভে, পরজন্মে উহার অস্তিত্বের বিকাশ হয়। সে আত্মা (বিজ্ঞান) সেও নহে, পূর্ব্ব বিজ্ঞানকেই (আত্মাকেই) অবলম্বন করিয়া  পর বিজ্ঞান সম্ভব হইয়াছে।
বেদান্ত দর্শনে কারণ শরীরের উল্লেখ দেখিতে পাওয়া যায়। এই কারণ শরীর যদি ভবাঙ্গ চিত্তই হয়, তবে বিশেষ গোলে পড়িতে হয় না। ভবাঙ্গ অন্যান্য চিত্তের ন্যায় সক্রিয় নহে। ইহা অতি সুক্ষ্ম স্পর্শ-বেদনা-সংজ্ঞা-চেতনা-একাগ্রতা-মনষ্কার জীবেতেন্দ্রিয় ও অন্যান্য চৈতসিক সম্পর্কিত। ভবাঙ্গের একমাত্র প্রকাশ সুসুপ্তি। সমুদয় চিত্ত মহুর্মুহু উতপন্ন হইয়া বিলয় প্রাপ্ত হইতেছে।প্রতি চিত্তই কিন্তু অভিনব। কিন্তু ভবাঙ্গ জন্ম হইতে মৃত্যু পযর্ন্ত প্রতিচিত্ত বীথির আদিতে ও অন্তে সমুদিত হইয়া চিত্তোতপত্তির অবকাশ প্রদান করিয়া থাকে; কিন্তু সে স্বয়ং পুরাতন সদৃশ, অভিনবত্ব তাহার নাই। পুনর্জন্মেই সে অভিনব হয়, জীবের কৃতকর্ম্মানুসারে। যদি এই কারণ শরীর , কর্ম্ম-কারণ জাতীয় হয় তবে বৈদান্তিক আত্মা বৌদ্ধ বিজ্ঞান সন্ততির রূপ ধারণ করে এবং উভয় জাতীয় আত্মার কোন ভেদ থাকে না। ব্রহ্মবাদেও না। ভেদ থাকিয়া যায় মুক্তি বিমুক্তির মধ্যে। বেদান্তে ব্রহ্ম বৈলিন্যই মুক্তি, এরূপ সিদ্ধান্ত করা হইয়াছে। তথাগত উহা সায়ুক, সসীম মুক্তি মাত্র বলিয়া, বিজ্ঞান সন্ততির প্রবাহ ছিন্নকেই বিমুক্তিরূপে দেখাইয়াছেন। সইচ বিকল হইলে যেমন বিজলী ধারা রুদ্ধ হয় এবং তত্ সঙ্গেই বাতি নিভিয়া যায়, এইরূপ বিজ্ঞান সন্ততি বিকল হইয়া গেলে তৃঞ্চাধারাও রুদ্ধ হইয়া যায়। তৃঞ্চার নিরোধে আত্মারূপ জীবনদীপ চিরতরে নিবৃত্ত হয়।
তথাগত বুদ্ধ কিরূপে বহুজনে প্রতিষ্ঠিত আত্মবাদ খন্ডন করিয়াছিলেন, মহাপন্ডিত গ্রীকরাজ মিলিন্দের প্রশ্নে ও বিচিত্রবাদী মহাভিজ্ঞ স্থবির নাগসেনের উত্তরে, স্পষ্টানুভূতি পাওয়া যাইবে। চিন্তাশীল ব্যক্তিগণ সাধারণত: ঈশ্বর-অনীশ্বর আত্মা-অনাত্মা বিষয়েই প্রথমে চিন্তা করিয়া থাকেন। ইহা যেন একান্ত স্বাভাবিক। মহারাজ মিলিন্দও প্রথমে প্রশ্নে উহাই গ্রহণ করিয়াছিলেন:-
মিলিন্দ- ভন্তে! আপনি কিরূপে জ্ঞাত হইয়া থাকেন? আপনার নাম কি?
নাগসেন- মহারাজ! আমি নাগসেন বলিয়া জ্ঞাত, নাগসেন কিন্তু সংজ্ঞা প্রকাশ ব্যবহার ও নাম মাত্র, এখানে কোন ব্যক্তি বা অবযবী উপলদ্ধি হয় না।
মিলিন্দ- যদি ভন্তে ব্যক্তি না থাকে, তবে কে আপনাকে চীবরাদি ও চতুষ্টয় দান করে, কে উপভোগ করে, কে ভাবনা অভ্যাস করে, কে মাগর্ফল প্রত্যক্ষ করে,কে প্র্রাণী হত্যাদি পঞ্চ অকুশল কর্ম সম্পাদন করে? তাহা হইলে কুশল নাই, অকুশল নাই, কুশলাকুশলের কর্ত্তা নাই, কারয়িতা নাই, সুকৃত-দুষ্কৃত কর্মের ফলও নাই।আপনাকে যদি কেহ হত্যা করে তাহা হইলেও হত্যাকারীর কোন পাপ হইবে না। আপনার আচায্য নাই, উপাধ্যায় নাই, উপসম্পদাও নাই। আপনি যাহাকে লক্ষ্য করিয়া বলিলেন যে মহারাজ! আমি নাগসেন বলিয়া জ্ঞাত। এখানে সেই নাগসেন কে? ভদন্ত! কেশগুলি কি নাগসেন?
নাগসেন- না মহারাজ।
মিলিন্দ- লোম, নখ, দন্ত, ত্বক, মাংস নাগসেন?
নাগসেন- না মহারাজ।
মিলিন্দ- রূপ, বেদনা, সংজ্ঞা, সংষ্কার, বিজ্ঞান নাগসেন?
নাগসেন- না, না, না মহারাজ।
মিলিন্দ- তবে কি ভন্তে! রূপ, বেদনা, সংজ্ঞা, সংষ্কার, বিজ্ঞান এই পঞ্চস্কন্ধের সমষ্টিরূপে নাগসেন?
নগসেন- না, মহারাজ।
মিলিন্দ- ভদন্ত! আপনাকে জিজ্ঞাসা করিয়া করিয়া নগসেনকে পাইলাম না। নাগসেন কি তবে শুধু শব্দই? বিদ্যমান নাগসেন কে তবে? আপনি মিথ্যা বলিয়াছেন, নাগসেন নাই।
নাগসেন- মহারাজ, আপনি ক্ষত্রিয়-কুমার, সুকোমল শরীর আপনার, মধ্যাহ্ন সময় এখন, ভূমি তপ্ত, উঞ্চ বালুকার উপর তীক্ষ্ম কাঁকর, ভগ্ন মৃপাত্র সমূহ মর্দন করিয়া পদব্রজে আসায় সম্ভবত: আপনার চরণ উপহত হইয়াছে, শরীরও বোধহয় ক্লান্ত হইয়াছে?
মিলিন্দ- আমি রথে করিয়া আসিয়াছি ভন্তে, আমার বিন্দুমাত্র ক্লান্তি হয় নাই।
নাগসেন- মহারাজ আপনি যদি রথে আসিয়া থাকেন, তবে রথ কি তা আমাকে বলুন। ঈশা কি রথ?
মিলিন্দ- না ভদন্ত।
নাগসেন- অক্ষ, চক্র, পঞ্জর, দন্ড, রজ্জু, প্রতোদ দন্ড কি রথ?
মিলিন্দ-না,না,না ...ভদন্ত।
নাগসেন-তবে কি মহারাজ ঐগুলির সমষ্টিরূপে রথ?
মিলিন্দ-না ভদন্ত।
নাগসেন- আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করিয়া করিয়া হয়রাণ হইলাম, অথচ রথ দেখিতে পাইতেছি না। মহারাজ, রথ কি তবে কেবল শব্দমাত্র? তবে এখানে বিদ্যমান রথ কি?আপনি মিথ্যা বলিয়াছেন, এখানে রথ নাই।
মিলিন্দ- ভদন্ত! আমি মিথ্যা বলি নাই। ঈশা চক্রাদির সমবায়ে সুসংবদ্ধতা হেতু রথ। ইহা সংজ্ঞা প্রকাশ, ব্যবস্থারও নাম মাত্র।
নাগসেন- সাধু, সাধু, মহারাজ রথ কি তাহা আপনি ভাল জানেন। ঠিক এইরূপই মহারাজ! কেশ-লোমাদি রূপ এবং বেদনা-সংজ্ঞা-সংষ্কার-বিজ্ঞান এই পঞ্চস্কন্ধ হেতুই নাগসেন। এইগুলিকে আশ্রয় করিয়াই নাগসেন সংজ্ঞা, ব্যবহার, প্রকাশ ও নাম মাত্র প্রবর্ত্তিত হইতেছে। পরমাথর্ত: এখানে পৃথক কোন ব্যক্তি বা অবয়বীস্বরূপ লোকের বা আত্মার উপলদ্ধি হয় না।
মিলিন্দ- সাধু, সাধু, ভন্তে নাগসেন, অতি সুন্দর ও বিচিত্র রূপে আপনি  উত্তর প্রদান করিয়াছেন।
মন্ত্রী অনন্তকায়ের প্রশ্ন
অনন্তকায়- ভদন্ত নাগসেন! এই যাহাকে আমি নাগসেন বলিতেছি, সেই নাগসেন এখানে কে?
নাগসেন- আপনি কাহাকে নাগসেন মনে করেন?
অনন্তকায়- আমি মনেকরি যে, সেই অভ্যন্তরস্থ বায়ুই নাগসেন; যাহা প্রবেশ করিতেছে আর নিষ্ক্রান্ত হইতেছে।
নাগসেন- যদি এই বায়ু নিষ্ক্রান্ত হইয়া আর প্রবেশ না করে, অথবা প্রবেশ করিয়া আর নিষ্ক্রান্ত না হয়, তবে কি সেই পুরুষ জীবিত থাকিবে?
অনন্তকায়- না ভদন্ত।
নাগসেন- এই য়ে শঙ্ক বাদকেরা শঙ্ক বাদন করে, সেই বায়ু কি তাহাদের মধ্যে পুনরবার প্রবেশ করে?
অনন্তকায়- না ভদন্ত।
নাগসেন-তাহা হইলে শঙ্ক বাদকেরা মরে না কেন?
অনন্তকায়- আপনি বাদী, বিচারশীল, আপনার সহিত আলাপ করিতে আমি অসমর্থ।
ভাল ভদন্ত, এখানে তত্ত্ব কথা কি তাহা আপনি আমাকে বলুন।
নাগসেন- বায়ু ঝীব নহে, ইহা আশ্বাস- প্রশ্বাস, শরীরের ধর্ম্ম।

বৌদ্ধ ধর্মান্তর প্রসঙ্গে -ভদন্ত এস. ধাম্মিকা


প্রশ্নঃ- আমি যদি বৌদ্ধ হতে চাই, তাহলে আমাকে কী করতে হবে?
উত্তরঃ একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে চাই। বুদ্ধের সময়ে উপালী নামে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী একজন বিখ্যাত পন্ডিত যুক্তি তর্কে বুদ্ধকে পরাস্ত করার উদ্দেশ্যে বুদ্ধের কাছে যান। বিভন্ন বিষয়ে আলোচনার পর তিনি বুদ্ধের দর্শন পর্যলোচনায় মুগ্ধ হয়ে নিজেই বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করে বুদ্ধের অনুসারী হতে তাঁর সিদ্ধান্তের কথা বুদ্ধকে জানালে বুদ্ধ উপালীকে বলেনঃ
যে কোন কাজ তাড়াহুড়া করে করা উচিত নয়। সব কাজ ধীরে ধীরে নির্ভূল ভাবে করা উচিত। প্রথমে সম্যকভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করুন; তাড়াহুড়া না করে এই বিষয়ে আরও প্রশ্ন করার অবকাশ নিন। আপনার মতো একজন খ্যাতিমান পন্ডিতের জন্য এটি বিশেষ প্রয়োজন। যথার্থ বিচার বিশ্লেষণ না করে সিদ্ধান্ত নেয় সমীচিন নয়।
উপালী বলেছেন, “বুদ্ধ আমাকে সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে ঐভাবে বলাতে  আমি বুদ্ধের প্রতি আরও মুগ্ধ হয়ে গেলাম। আমি অন্য ধর্মে ধর্মান্তরিত হলে সারা নগরে প্রচার-পত্র বিলি করে বিখ্যাত পন্ডিত উপালীর ধর্মান্তরিত হবার খবর প্রচার করে নিজ ধর্মের মহিমা প্রকাশ করা যেত। কিন্তু বুদ্ধ তা না করে আমাকে তাঁর দেশিত ধর্ম অবলম্বনের আগে গভীরভাবে যুক্তি, বিচার, বিশ্লেষণের উপদেশ দিলেন” [মধ্যম নিকায়২য় খন্ড পৃঃ৩৭৯]
বৌদ্ধদর্শন বিচার  বিশ্লেষণের মাধ্যমে যে কোন বিষয়কে বুঝার বিষয়টিকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যে কোন কাজ সময় নিয়ে, ধীরে-সুস্থে, তাড়াহুড়া না করে সম্পাদন করতে বুদ্ধ আনুসারীদের উপদেশ দিয়েছেন। বিপুল সংখ্যায় অনুসারী সৃষ্টি করতে তিনি কখনও আগ্রহী ছিলেন না। বরং যাঁরা তাঁর অনুসারী হচ্ছেন, তাঁরা বিচার বিশ্লেষন করে গ্রহণ করছেন কিনা, সেই ব্যপারে তিনি উদ্বিগ্ন থাকতেন।
প্রশ্নঃ- আমি নিজে এই বিষয়ে বিশ্লেষন করেছ; বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করতে এখন আমার কি করা প্রয়োজন?
উত্তরঃ এ ব্যাপারে আমার পরামর্শ হলো- আপনি প্রথমে কোনও বৌদ্ধ বিহারে বা বৌদ্ধধর্মীয় কর্মী সংগঠনে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করুন ও বৌদ্ধ দর্শন, বৌদ্ধ জীবনাচার সম্পর্কে আরও জানার চেষ্টা অব্যাহত রাখুন। তারপর যখন মনে হবে আপনি সম্পূর্ণ প্রস্তুত, তখন আনুষ্ঠানিকভাবে ত্রিরত্নের শরণ নিয়ে বৌদ্ধ হবেন।
প্রশ্নঃ- ত্রিশরণ কি?
উত্তরঃ শরণ হলো আশ্রয়স্থল  যেখানে বিপদগ্রস্থ মানুষ নিরাপত্তার আশ্রয় গ্রহণ করেন। আশ্রয়স্থল নানা প্রকারের- অসুখী হলে মানুষ আশ্রয় নেয় বন্ধুবান্ধবের। মৃত্যপথযাত্রী মানুষ আপন বিশ্বাস অনুযায়ী স্বর্গে আশ্রয় কামনা করেন। বুদ্ধের মতে ঐ ধরণের কোন আশ্রয়স্থল নয়। কারণ ঐ সব আশ্রয়স্থল প্রকৃত স্বস্তি ও শান্তির নিরাপত্তা দিতে পারে না।এই প্রসঙ্গে বুদ্ধের উক্তি-
“চতুরার্য সত্যে অর্থাৎ দুঃখ, দুঃখের কারণ, দুঃখ রোধ এবং দুঃখ রোধের উপায়, আর্যঅষ্টাঙ্গিক মার্গ সম্পর্কে জ্ঞাত হয়ে বুদ্ধ, ধর্ম, সংঘের আশ্রয় গ্রহণ করলে মানুষ সকল প্রকার দুঃখ থেকে অব্যহতি পান। কার্যকারণ ভিত্তিক নয়, এইরূপ আশ্রয় স্থলে আশ্রয় নিতে আপাতদৃষ্টিতে নিরাপত্তা বোধ হয় বটে, সেই আশ্রয়স্থল প্রকৃতপক্ষে নিরাপদ আশ্রয় নয়। বুদ্ধ, ধর্ম ও সংঘ এই তিন আশ্রয়স্থল সবোর্ত্তম আশ্রয়স্থল। কেননা, এটি মঙ্গলামঙ্গল কার্যকারণ প্রক্রিয়াজাত। বুদ্ধের আশ্রয় গ্রহণের অর্থ, বুদ্ধের মতো অজ্ঞতার অন্ধকার মুক্ত হয়ে জ্ঞানালোকে আলোকিত হতে উদ্বুদ্ধ হবার আশ্রয়স্থলে গমনোদ্যোগ। ধর্মে আশ্রয় গ্রহণের অর্থ, প্রত্যক্ষভাবে পরীক্ষিত,সুব্যখ্যাত, সর্বকালীন, সার্বজনীন প্রকৃত সুখশান্তিপ্রদ বুদ্ধের দেশিত জীবনাচরণে উদ্বুদ্ধ হবার গমনোদ্যোগ। সংঘে আশ্রয় গ্রহণের অর্থহলো, যাঁরা শ্রদ্ধার পাত্র এবং বুদ্ধ ও ধর্ম বিষয়ে সুপন্ডিত, সদাচারী, যাঁরা শ্রদ্ধার পাত্র এবং বুদ্ধ ও ধর্মের ব্যাখ্যা সহজভাবে ও বোধগম্য করে প্রচার করেন, তাঁদের  উপদেশাদি ও জীবনাচারণে অনুশীলনোদ্যোগ গ্রহণ”। [ধম্মপদ পৃঃ১৮৯-১৯২]
প্রশ্নঃ- ত্রিরত্নের আশ্রয় গ্রহণের পর আপনার জীবনে কি কি পরিবর্তন এসেছে?
উত্তরঃ বুদ্ধের শিক্ষা ২৬০০ বছরে সময় ব্যাপী কোটি কোটি মানুষের মতো আমাকে জগত জীবনের প্রকৃত স্বরূপ সম্পর্কে জ্ঞাত হয়ে জীবন জগতের নিত্য দুঃখ যন্ত্রণা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জীবনাচরণ অনুশীলন করে জীবনের দ্বায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে জানতে সাহায্য করেছে। বুদ্ধ নির্দেশিত মানবিক, নৈতিক ও সংযত জীবন যাপন করলে জীবন কিরূপ পবিত্র ও আনন্দময় হয়ে উঠে, তা উপলদ্ধি করতে পেরেছি। আমি এতে প্রশান্ত ও শুদ্ধ জীবন যাপন করতে উদ্বুদ্ধ হয়েছি। বুদ্ধকে উদ্দেশ্য করে একজন কবি নিবেদন করেছেনঃ- তাঁর কাছে আশ্রয় নিতে যাওয়া, তাঁর প্রশংসাস্তুতি, তাঁকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন এবং প্রচারিত ধর্মের অনুশীলন করার মাধ্যমে তাঁর বাণীকে সম্যকভাবে বুঝে নেবার সুযোগ ঘটে এবং এক অনাবিল প্রশান্তি ও আনন্দে জীবন ভরে ওঠে।
প্রশ্নঃ- আমার এক বন্ধু তাঁর ধর্মে আমাকে ধর্মান্তরিত করতে চান।কিন্তু আমি তাঁর ধর্ম গ্রহণ করতে আগ্রহী নই। এই অবস্থায় কি করা যায়?
উত্তরঃ প্রথমতঃ বুঝতে হবে ঐ ব্যক্তি আপনার প্রকৃত বন্ধু কিনা? একজন প্রকৃত বন্ধু আপনাকে আপনার মতো করে আপনার রুচি, বিশ্বাস, আচরণকে যথোচিত সম্মান করবেন। আমার মনে হচ্ছে, আপনার ঐ বন্ধু আপনার বন্ধু হবার ভান করে আপনাকে ধর্মান্তরিত করতে চাচ্ছেন। যাঁরা নিজের মতামত অন্যের উপর চাপিয়ে দেন, তাঁরা প্রকৃত বন্ধু হতে পারেন না।
প্রশ্নঃ- তিনি আমাকে তাঁর ধর্মীয় অনুভূতির অংশীদার করতে চান। এখানে আপনার অভিমত কি?
উত্তরঃ নিজের মতের সঙ্গে বন্ধুকে অংশীদার করা ভালো। কিন্তু আপনার বন্ধু ধর্মানুভূতির অংশীদারী করা এবং চাপিয়ে দেয়ার মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পাচ্ছেন বলে মনে হয় না। ব্যাপারটি অনেকটা এই রকমঃ মনে করুন, আমার একটি আপেল আছে। আমি এর অর্ধেক আপনাকে কেটে দিলাম, বাকীটা আমি খেলাম। এখানে ব্যাপারটি অংশীদারী। কিন্তু আমি যদি গোটা আপেলটিখেতে খেতে আপনাকে অর্ধেক আপেলের অংশীদার হতে বলি, তাহলে তা অংশীদারী করার প্রস্তাব হতে পারে না। অনেকে আপনার বন্ধুর মত ভান করে নিজের হীনস্বার্থ উদ্ধার করতে চেষ্টা করেন। এইরূপ ব্যক্তির কাছ থেকে সাবধান থাকা নিরাপদ।
প্রশ্নঃ- তাহলে কি করে আমার বন্ধুকে থামানো যায়?
উত্তরঃ কাজটি সহজ। আপনি কি করতে চান প্রথমে সিদ্ধান্ত নিন। তারপর আপনার বন্ধুকে স্পষ্টভাবে তা বলে দিন। এরপরেও যদি তিনি আপনাকে সঙ্গে নিতে চান, তখন বিনীতভাবে বলুন, আপনার প্রস্তাবের জন্য ধন্যবাদ; কিন্তু আমি আপনার ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে চাই না।
কেন চান না?
সেটি আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।
আমি বন্ধু হিসেবে আপনাকে আমার সঙ্গে নিতে চাই
আমার ব্যাপারে আপনার আগ্রহের জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু আপনার সঙ্গে যেতে আগ্রহী নই
উপরে সাজানো কথোপকথনের মহড়ার মতো বারবার ধৈর্য্যের সঙ্গে বিনীতভাবে আপনার অনিচ্ছার কথা বলতে থাকলে, অবশেষে তিনি ক্ষান্ত হবেন। বন্ধুর সঙ্গে ঐভাবে কথোপকথনের ব্যাপারটি বিব্রতকর বটে, কিন্তু ঐপরিস্থিতিকে ঐভাবে সামলানো ছাড়া উপায় নেই।
প্রশ্নঃ- বৌদ্ধদের কি উচিত অন্য ধর্মবলম্বীদের তাঁদের সদ্ধর্মে অংশীদার করার চেষ্টা করা?
উত্তরঃ তা করতে কোনও বাধা নেই। কারণ কোনও মতবাদে অংশীদার করা এবং চাপিয়ে দেয়ার পার্থক্যটি বৌদ্ধেরা বুঝতে পারেন বলে আমার বিশ্বাস। কেউ বৌদ্ধ দর্শন সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হলে, এমনকি জানতে না চাইলেও স্থান কাল পাত্র বিশেষে বিচার করে বুদ্ধের শিক্ষার কথা বলা যেতে পারে। তবে যদি লক্ষ্য করা যায়,শ্রোতা আপনার কথা শুনতে আগ্রহী নন্, বরং তিনি নিজ ধর্ম সম্পর্কে অতি উৎসাহী, সেক্ষেত্রে তাঁর ধর্মের প্রতি যথোচিত সম্মান প্রদর্শন করে আপনার অভিমত সম্বন্ধে বক্তব্য প্রদান করা থেকে বিরত থাকা বাঞ্চনীয়। মনে রাখবেন, সদ্ধর্ম প্রচারণার জন্য ধর্মোপদেশের জন্য জীবনাচরণের মাধ্যমে সদ্ধর্মের প্রচার অধিকতর কার্যকরী। শুধু কথায় নয়, কায়-মনো-বাক্যের মাধ্যমে, সদ্ধর্মের অন্তর্নিহিত মৈত্রী-করুণা-ক্ষমা-সহনশীলতা-ত্যাগের কথা নিজের জীবনাচরনের মাধ্যমে চার পাশের মানুষের কাছে প্রচার করুন।
যদি আমরা সবাই বৌদ্ধ দর্শনের মর্মবাণী সম্যকভাবে বুঝতে পারি এবং পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে অনুশীলনে প্রয়াসী হই, ঔদার্যের  মনোভাব নিয়ে অন্যদের  অনুপ্রাণিত করি, তাহলে তা আমাদের এবং অন্যদের মহামঙ্গল সাধন করবে।
 [*** ঝড় তুফানের এলোপাথারী ঝাপ্টায় যেমন ভারী শিলাখন্ড অনড় থাকে, জ্ঞানী ব্যক্তিরা তেমনি সংসারের নিন্দা-প্রশংসার অকম্পিত হৃদয়ে সংসারে বিচরণ করেন।***]


[***গভীর জলাকীর্ণ হ্রদ যেমন স্ফটিকের স্বচ্ছতায় প্রশান্ত হয়ে বিরাজমান থাকে, প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি তেমনি সদ্ধর্ম জ্ঞাত হয়ে অপ্রমেয় শান্তিতে বসবাস করেন।***]


[***ক্রোধকে অক্রোধ এবং শত্রুতাকে মৈত্রী দিয়ে,


ঈর্ষাপরায়নতাকে ক্ষমা দিয়ে জয় করিবে।


যুদ্ধক্ষেত্রে লক্ষ লক্ষ যোদ্ধাকে পরাজয় করা অপেক্ষা


যিনি নিজের লোভ, দ্বেষ, মোহাদি রিপুকে


মুদিতা ও উপেক্ষার দ্বারা জয় করেছেন,


তিনিই প্রকৃত বিজয়ী বীরযোদ্ধা।***]
....................................................................................................................................................................................................................................................................

মৈত্রী ভাবনা হল সকলের প্রতি মৈত্রী ভাব পোষণ করা।



মৈত্রী ভাবনা হল সকলের প্রতি মৈত্রী  কামনা করা। মনের গভীরে যদি কারও প্রতি ঘৃণা, ক্ষোভ, হিংসা, লুকিয়ে থাকে কিংবা কারও সাথে শত্রুভাবাপন্ন সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে তা বিদুরিত করতে মৈত্রী ভাবনা করতে হয়। এই ভাবনার গুণাগুণ বর্ণণাতীত। একাগ্রতার সাথে সঠিক পন্থায় ভাবনা অনুশীলন করলে এর ফল প্রত্যক্ষ। মৈত্রী ভাবনার বিভিন্ন পদ্ধতি প্রচলন রয়েছে । তন্মধ্যে একটি পদ্ধতি সংক্ষেপে বর্ণনা করা হল।
মৈত্রী ভাবনা শুরুর নিয়মাবলীঃ
ভাবনা শুরুর পূর্বে হাতমূখ ধুয়ে  সম্ভব হলে গোসল করে প্রস্তুতি নিতে হবে। পরিচ্ছন্ন পোষাক পরিধান করলে মন নিবিষ্ঠ হবে এবং ভাবনা করতে সুবিধা হবে। এরপর ত্রিশরণ গ্রহণ করে ভাবনা শুরু করতে হবে,সম্ভব হলে পঞ্চশীল অধিস্থান করে নিতে পারেন। এরপর নিরিবিলি একটা জায়গা নির্বাচন করে ভদ্রাসনে কিংবা পদ্মাসনে কোমর সোজা রেখে বসতে হবে। কোলের উপরে বাম হাতের তালুর উপর ডান হাত রাখতে হবে। উভয় হাতের তালু উর্দ্ধমূখী থাকবে এবং দুচোখ আলতো করে বন্ধ রাখতে হবে। এবার মনে মনে বলুন-
.          আমি সুখী হই, রোগমুক্ত হই, বিপদমুক্ত হই, শত্রুমুক্ত হই সুখে জীবন যাপন করি(এভাবে ৩/৫ মিনিট মনে মনে আবৃত্তি করতে করতে ভাবনা করুন)।
.          আমার অনুরূপ আমার বাবা-মাও সুখী হোক, রোগমুক্ত হোক, বিপদমুক্ত হোক, শত্রুমুক্ত হোক সুখে জীবন যাপন করুক(এভাবে ৩/৫ মিনিট মনে মনে আবৃত্তি করতে করতে ভাবনা করুন)।
.          এরপর ভাবুন, আমার শিক্ষকবৃন্দ এবং বয়োজ্যষ্ঠগণও আমার অনুরূপ সুখী হোক, রোগমুক্ত হোক, বিপদমুক্ত হোক, শত্রুমুক্ত হোক সুখে জীবন যাপন করুক(এভাবে ৩/৫ মিনিট মনে মনে আবৃত্তি করতে করতে ভাবনা করুন)।
.          আমার অনুরূপ আমার ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজনরাও সুখী হোক, রোগমুক্ত হোক, বিপদমুক্ত হোক, শত্রুমুক্ত হোক সুখে জীবন যাপন করুক(এভাবে ৩/৫ মিনিট মনে মনে আবৃত্তি করতে করতে ভাবনা করুন)।
.          আমার অনুরূপ আমার বন্ধুরাও সুখী হোক, রোগমুক্ত হোক, বিপদমুক্ত হোক, শত্রুমুক্ত হোক সুখে জীবন যাপন করুক(এভাবে ৩/৫ মিনিট মনে মনে আবৃত্তি করতে করতে ভাবনা করুন)।
.          এরপর আপনার পরিচিত কিন্তু ঘনিষ্ঠ নন্ এমন ব্যক্তিদের মঙ্গল কামনা করে ভাবুন- আমার অনুরূপ তারাও সুখী হোক, রোগমুক্ত হোক, বিপদমুক্ত হোক, শত্রুমুক্ত হোক সুখে জীবন যাপন করুক(এভাবে ৩/৫ মিনিট মনে মনে আবৃত্তি করতে করতে ভাবনা করুন)।
.          সবশেষে, যে/যাদের সাথে আপনার সুসম্পর্ক নেই, যে/যাদের আপনি সহ্য করতে পারেন না অথবা আপনাকে সহ্য করতে পারে না, শত্রুতা সম্পর্ক বিদ্যমান তাদের মঙ্গল কামনা করে ভাবুন- তারাও সুখী হোক, রোগমুক্ত হোক, বিপদমুক্ত হোক, শত্রুমুক্ত হোক সুখে জীবন যাপন করুক(এভাবে ৩/৫ মিনিট মনে মনে আবৃত্তি করতে করতে ভাবনা করুন)।








সৌভাগ্য ও অদৃষ্ট- ভদন্ত এস ধাম্মিকা


প্রশ্নঃ- তান্ত্রিকতা ও ভাগ্যগণনা সম্পর্কে বুদ্ধর অভিমত কি?
উত্তরঃ ভাগ্য গণনা, রক্ষাকবচ এবং গৃহনির্মাণ ও যাত্রায় শুভ অশুভ দিন ধায্যকরণকে বু্দ্ধ অর্থহীন কুসংষ্কার আখ্যায়িত করে তাঁর অনুসারীদের এই আচারাদি পালন করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।
প্রশ্নঃ- এতে কোনও সত্যতা না থাকলে অনেকে কেন তান্ত্রিকতা বিশ্বাস ও চর্চা করেন?
উত্তরঃ লোভ, ভয় ও অজ্ঞতার কারণে এগুলির চর্চা করা হয়। বুদ্ধের উপদেশ গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে বুঝা যায়, এক টুকরা কাগজ, ধাতব মুদ্রাখন্ড, কিংবা অন্য কোনও পাথর কণা অপেক্ষা মানুষের মহহৃদয়বৃত্তিজাত কুশলকর্ম অনেক বেশী শক্তিশালী। বুদ্ধের গভীর সাধনালব্দ বাস্তব অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান-আলোকে মানুষ সদাচার, করুণা, ক্ষমা, ধৈয্য, ত্যাগ ও সততাধর্মী জীবনাচারের সাহায্যে প্রকৃতপক্ষে অশুভ ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে পারেন। তাই তান্ত্রিকতার আচার অনুষ্ঠানকে তিনি নিম্নমানের বৃত্তি বা জীবীকা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
প্রশ্নঃ- কিছু তান্ত্রিকতা কায্যকরী বলে শোনা যায়, তাই নয় কি?
উত্তরঃ লক্ষ্য করবেন, যাঁরা ঐ পন্থায় জীবিকা নির্বাহ করেন, তাদের দাবি হলো ভাগ্য পরিবর্তন করে তারা সৌভাগ্যের গ্যারান্টি দিতে পারেন। তাই যদি সত্যি হয়, তাহলে তারা নিজেরা কেন বিপুল সম্পত্তির অধিকারী নন?  তাঁরা কেন নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারেন না? কেন প্রতি সপ্তায় লটারী জিতে মোটা অর্থ লাভ করেন না? আসল কথা হলো তাদের এইটুকু ভাগ্য যে, কিছু বোকা বা অজ্ঞ মানুষ পাথর কিংবা রক্ষাকবচ ক্রয় করে তাদের জীবিকা অর্জনে সাহায্য করেন। এখানে সাধারণ মানুষের মনে অলীক বিশ্বাস ও মোহ সৃষ্টি করে তা স্বার্থসিদ্ধির কজে লাগানো হয়।
প্রশ্নঃ- ভাগ্য বলে কি কিছুই নেই?
উত্তরঃ ভাগ্য বিশ্বাসীরা বিশ্বাস করেন, এমন অদৃশ্য শক্তিকে, যা খেয়াল খুশিমত মানুষের ভাল-মন্দ নির্ধারণ করে থাকে। কিন্তু বৌদ্ধ দর্শন ও বিজ্ঞানের কার্যকারণ প্রক্রিয়া মতে জগত জীবনে সুনিদিষ্ট কারণ ছাড়া কোন ঘটনা ঘটে না। এখানে ব্যক্তি বিশেষের প্রতি পক্ষপাতিত্বের কোন অবকাশ নেই। দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষ জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে রোগাগ্রস্ত হয়। এখানে সুনির্দিষ্ট রোগ হলো ঘটনা; সুনির্দিষ্ট রোগ জীবাণু এবং দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতা হলো কারণ। চিকিসার সাহায্যে কারণ দূর করলে রোগ নিরাময় হয়। এখানে রোগ জীবাণু ও ঔষধ এই দুইটি জাতি-ধর্ম-সম্প্রদায়ের ভেদাভেদ করে না। তান্ত্রিক শাস্ত্রের কোন কাগজের টুকরো বা ধাতব পদার্থ খন্ড, কিংবা পাথরে লিখা কোন ধর্মীয় বাণী কিংবা পাঠ করে মন্ত্র ধারণ করলেরোগ প্রতিরোধ বা নিরাময়ে কার্যকরী হবার কোন কারণ নেই। মানুষের কুশল অকুশল ঘটনার কারণ হলো- মানুষের কৃত কুশল-অকুশল জীবনাচরণধর্মী কর্ম। যাঁরা অলৌকিকতার ভাগ্যে বিশ্বাস করেন, তাঁরা সাধারণতঃ অনিয়ন্ত্রিত অর্থ-সম্পদের চাহিদার পেছনে অন্তহীন অসন্তুষ্টি নিয়ে ছুটে চলেন। বুদ্ধ বলেছেন, সুশিক্ষিত, সুদক্ষ, বিভিন্ন বিষয়ে সুনিপুণ এবং সুভাষী হওয়া উত্তম মঙ্গলকারক, পরম সৌভাগ্যদায়ী।
মাতা-পিতার সেবা, স্ত্রী-পুত্র-কন্যার ভরণ পোষন, সাধাসিধে জীবন যাপন করা উত্তম মঙ্গল, পরম সৌভাগ্যদায়ী।
ত্যাগী হওয়া, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, অভাবগ্রস্তদের সাহায্য এবং নিদোর্ষ কর্মসম্পাদন করা উত্তম মঙ্গল, পরম সৌভাগ্যদায়ী।
কৃতজ্ঞ, সন্তুষ্ট, শ্রদ্ধাবান, বিনম্রী মানবতাবোধ হওয়া, সদ্ধর্ম শ্রবণ করা উত্তম মঙ্গল এবং পরম সৌভাগ্য দায়ী। উক্ত কর্মক্রিয়াই মানুষের শুভ-অশুভ ফলাফল প্রদান করতে সক্ষম; অন্য কিছু নয়
[*** অসবন্ধুর সঙ্গ বর্জন করো, সবন্ধুর সঙ্গলাভ করো,মহব্যক্তির সংস্পর্শে গমন করো।***
*** যিনি পন্ডিত ও প্রবীন ব্যক্তিদের সম্মান ও শ্রদ্ধা করেন, তিনি দীর্ঘায়ু, যশ, সুখ, শান্তি- সম্পদ লাভ করেন।***]
........................................................................................................

কুশল প্রশ্নোত্তর: প্রজ্ঞা ও করুণা - ভদন্ত এস. ধাম্মিকা


..............................................................................................................................................................................................
প্রশ্নঃ-প্রজ্ঞা ও করুণার কথা বৌদ্ধধর্ম দেশনায় প্রায় শোনা যায়। প্রজ্ঞা-করুণা বলতে কি বুঝায়?
উত্তরঃ ভালোবাসা ও করুণাকে কোন কোন ধর্মে সর্বশ্রেষ্ঠ গুণাবলী বলে আখ্যায়িত করা হয়। কিন্তু প্রজ্ঞার কথা উল্লেখ থাকে না। প্রজ্ঞা ছাড়া ভালোবাসা ও করুণায় গুণান্বিত হয়ে আপনি একজন সহৃদয় ব্যক্তি হতে পারেন বটে, কিন্তু অবোধ থেকে যাবেন। কারণ প্রজ্ঞার অভাবে আপনার মধ্যে নানা বিষয় সম্পর্কে বিচার বুদ্ধির অভাব থেকে যাবে। বস্তুবাদী বিজ্ঞানীরা মনে করেন, বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তির কাছে করুণা-ভালোবাসার মতো কোমল অনুভূতি গুলোর গুরুত্ব নেই। এতে প্রকৃতপক্ষে একজন বিজ্ঞানী হৃদয়বৃত্তি বর্জিত রোবোটে পরিণত হন। বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত প্রযুক্তি মানুষের সেবা না করে শোষণ ও শাসনে ব্যবহৃত হতে থাকে। এর প্রমাণ মেলে বিজ্ঞান প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে জীবাণু মারণাস্ত্রের মতো বিধ্বংসী অস্ত্র তৈরী করার মধ্যে। আধুনিক বস্তুবাদী দর্শনে যুক্তি, প্রজ্ঞা, বুদ্ধি ও মেধাকে ভালোবাসা, করুণা ও মৈত্রীর প্রতিপক্ষ বিষয় রপে অপব্যাখ্যা করা হয়। ফলে বুদ্ধিবৃত্তির সংঙ্গে হৃদয়বৃত্তির সমন্বয় ঘটে না। এতে যেখানে বিজ্ঞানের অগ্রগতি হয়েছে, সেখানে ধর্ম মূল্য হরিয়েছে। বৌদ্ধ দর্শনের মতে একজন প্রকৃত বিজ্ঞ মানুষের মধ্যে হৃদয়বৃত্তির ভলোবাসা ও করুণার সঙ্গে বুদ্ধিবৃত্তি ও প্রজ্ঞার সমন্বয় ঘটাতে হবে। বৌদ্ধ দর্শনে প্রজ্ঞা ও করুণার মধ্যে সমন্বিতি গুরুত্ব আরোপনের ফলে বিজ্ঞানের সঙ্গে বৌদ্ধ দর্শনের কোন সংঘাত ঘটে না। দৈনন্দিন জীবনে কায়মনো বাক্য দ্বারা সকল কর্মে কাম-ক্রোধ-লোভ-দ্বেষ বর্জন এবং মৈত্রী-করুণা-মুদিতা-উপেক্ষা গুণাবলী অর্জনের অনুশীলন হলো প্রকৃতপক্ষে প্রজ্ঞা ও করুণার মর্মবাণী।
প্রশ্নঃ- বৌদ্ধ দর্শন মতে প্রজ্ঞা বলতে কি বোঝায়?
উত্তরঃ বৌদ্ধ দর্শনে দেশিত প্রজ্ঞার দৃষ্টিতে জীবন জগতের সবকিছু প্রকৃতপক্ষে অসম্পূর্ণ(চরম এবং চুড়ান্ত নয়), অনিত্য বা অস্থায়ী(সদা পরিবর্তনশীল) এবং অনাত্ম(আত্ম বিহীন) অর্থা নিজ বলতে কিছুই নেই, যেহেতু প্রতিমুহুর্তে নিজ অবিরাম পরিবর্তনের আয়ত্তাধীন। তবে বুদ্ধ সবার কাছে প্রজ্ঞার কথা বলতেন না। কারণ প্রজ্ঞার অর্থ হৃদয়াঙ্গম করা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। প্রজ্ঞা হলো নিজে প্রত্যক্ষভাবে পর্যবেক্ষণ করে হৃদয়াঙ্গম করা। প্রজ্ঞার বিধান হলো চারিপাশের সবকিছু স্থান, কাল বিশেষে বিশ্লেষন করে খোলা মনে সবকিছুর সত্যতা মূল্যায়ন করা। নিজের বদ্ধমূল মতামত নিয়ে আবদ্ধ থাকা নয়, অন্যের মতামত ধৈয্যের সঙ্গে শোনা ও পরীক্ষা করা। প্রজ্ঞা বলতে বোঝায় প্রচলিত সংষ্কারে নিবদ্ধ না থেকে সম্যক দৃষ্টিতে গ্রহণ-বর্জনের মাধ্যমে নিজের অভিমত স্থির করা। যথার্থ প্রমাণ ও যুক্তির আলোকে যে কোন সময় নিজের মতামত পরিবর্তন করতে প্রস্তুত থাকা। যিনি অনুরূপভাবে আচরণ করেন, তিনিই প্রজ্ঞাবান। শোনা কথা বা প্রচলিত সংষ্কারে বিশ্বাস করা সহজ। বুদ্ধ নির্দেশিত প্রজ্ঞার পথে চলতে হলে প্রয়োজন হয় সসাহস, ধৈয্য, নমনীয়তা ও বুদ্ধিমত্তা। বৌদ্ধ দর্শনের এই সব গুণাবলী হলো প্রজ্ঞার মর্মবাণী।
প্রশ্নঃ- মনে হয় বৌদ্ধ দর্শন সাধারণ মানুষের কাছে সহজে বোধগম্য নয়। এইক্ষেত্রে দর্শনের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু?
উত্তরঃ একথা সত্য বৌদ্ধ দর্শনের সকল বিষয় সাধারণ মানুষের কাছে সহজে বোধগম্য নয়, তাই বলে এর প্রয়োজনীয়তা নেই একথা বলা যায় না। জীবন জগতের কঠোর, কঠিন সত্য বুদ্ধের বাস্তব অভিজ্ঞতায় উন্মোচিত হয়েছে যা বৌদ্ধদর্শনে বিধৃত। এখন কেউ তা বুঝতে না পারলে, ভবিষ্যত কর্মপ্রচেষ্টায় তা পারবেন। এই কারণে বৌদ্ধরা ধৈর্য সহকারে নিরবে নিভৃতে বৌদ্ধ দর্শন বিষয়কে উপলদ্ধি করতে সচেষ্ট হন। ধ্যন অভ্যাস এজন্য অবশ্য করণীয়। বুদ্ধ করুণা পরবশঃ হয়ে মানষের দুঃখমুক্তির জন্য তাঁর সাধনালব্দ সত্য মানুষের কাছে প্রচার করেছিলেন। আমরাও সেই উদ্দেশ্যে তা প্রচার করি।
প্রশ্নঃ- এবার বলুন করুণা কি?
উত্তরঃ প্রজ্ঞা যেমন আমাদের স্বভাব-চরিত্রের বৃদ্ধি ও মেধার দিক নির্দেশ করে, করুণা অনুরূপভাবে আমাদের স্বভাব-চরিত্রের কোমল অনুভূতির দিকটি নির্দেশ করে। প্রজ্ঞার মতো করুণা একটি অপরূপ মানবিক গুণ। করুণার ভাবার্থ ইংরেজী compassion শব্দের co এবং passion দিয়ে বুঝানো যেতে পারে। co অর্থ সমবায় বা সম্মিলিত এবং passion অর্থ সহমর্মিতা বা সহানুভূতি। অর্থা করুণা বলতে কারও অবস্থা(দুঃখ-কষ্ট)কে সহানুভূতির সঙ্গে উপলদ্ধি এবং অপরের দুঃখ-কষ্ট উপশম করার সচেতন প্রচেষ্টা বুঝায়। একজন করুণাসিক্ত ব্যক্তি নিজের প্রতি যে ভালবাসা পোষণ করেন, সেই ভালোবাসাতেই অন্যের দুঃখ অনুভব করেন। নিজেকে সঠিকভাবে বুঝতে পারলেই অপরকে বুঝা সম্ভব। নিজের জন্য যা উত্তম অন্যের জন্যেও তা উত্তম মনে করেন। নিজের প্রতি সহমর্মী হবার পর অন্যের প্রতি সহমর্মী হওয়া সম্ভব হয়। বৌদ্ধিক জীবনাচরণে নিজের স্বরুপ সম্পর্কে জ্ঞাত হলে অন্যের মঙ্গল কামনা অনুভূত হয়। কারণ জগতে জীবনের স্বরুপ এমন, সেখানে সবার প্রতি করুণা ছাড়া নিজের প্রকৃত সুখ-শান্তি পাওয়া যায় না। বুদ্ধের জীবনাচরণে এই সত্যটি মহিমান্বিত হয়ে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি  তাঁর দীর্ঘ ৬ বছরব্যাপী কঠোর সাধনালব্দ জ্ঞান, মানুষের প্রতি করুণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রচার করেছিলেন।
প্রশ্নঃ- আপনি বলেছেন নিজের কল্যাণ করার পর অন্যের কল্যাণ করা সম্ভব। এটি কি স্বার্থপরতা নয়?
উত্তরঃ সাধারণত স্বার্থপরতা  বলতে নিজের কল্যাণে এবং নিঃস্বার্থপরতা বলতে অন্যের কল্যাণে কর্মসম্পাদন বুঝায়। এর কোনটিকে বৌদ্ধদর্শনে ঐরূপ আলাদাভাবে না দেখে দুটিকে একীভূত করে দেখা হয়।  এতে জ্ঞানের আলোকে জ্ঞাত স্বার্থ চিন্তা ক্রমশঃ স্বার্থপরতা থেকে অন্যের স্বার্থ চিন্তার সঙ্গে একাত্ম হয়ে আবির্ভূত হয়। সহমর্মীতা দিয়ে মা তাঁর একমাত্র সন্তানের মঙ্গল কামনা করেন, সেইরূপ সহমর্মীতায় সকল জীবের প্রতি মঙ্গল কামনা হলো করুণা। বৌদ্ধিক গুণাবলী খচিত মুকুটে করুণা একটি অমূল্য রত্নের মতো শোভা পায়।
[***যথাশীঘ্র কুশলকর্ম সম্পাদনে উদ্যোগী হও। নিজের মন অকুশল কর্মে লিপ্ত কিনা পয্যবেক্ষণ করো। কুশলকর্ম সম্পাদনে বিলম্ব হলে মন অকুশলকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ে।]
........................................................................................................................

কুশলপ্রশ্নোত্তরঃনিরামিষ -ভদন্ত এস, ধাম্মিকা

নিরামিষ
প্রশ্নঃ- বৌদ্ধদের নিরামিষভোজী হওয়া উচিত নয় কি?
উত্তরঃ কোন বৌদ্ধকে অবশ্যই নিরামিষাশী হতে হবে- একথা ঠিক নয়। বুদ্ধ স্বয়ং নিরামিষাশী ছিলেন না। তাঁর অনুসারীদের তিনি কখনো নিরামিষাশী হতে উপদেশ দেননি। নিরামিষাশী নন এমন প্রকৃতবৌদ্ধ বর্তমানে বহু আছেন।
প্রশ্নঃ- কিন্তু আপনি যদি মাছ-মাংস খান, তাহলে পরোক্ষভাবে প্রাণীহত্যার জন্য দায়ী হচ্ছেন, যেখানে পঞ্চশীলের প্রথম শীল লঙ্ঘন করছেন, তাই নয় কি?
উত্তরঃ হ্যাঁ, একথা অনস্বীকায্য। যদি আমি মাছ-মাংস খাই, তাহলে পরোক্ষভাবে প্রাণী হত্যার জন্য দায়ী; কিন্তু নিরামিষভোজী হলেওতো পরোক্ষভাবে প্রাণী হত্যার জন্য দায়ী হতে হয়। কারণ কৃষকরা যেখানে চাষাবাদ করেন সেখানে কীটনাশক ঔষধ ব্যবহারের ফলে কীটপতঙ্গ মারা যায়। এছাড়া ব্রবহৃত চামরার বেল্ট, ব্যাগ, সাবান প্রভৃতি তৈরীতে পরোক্ষভাবে প্রাণী হত্যা করতে হয়। অতএব প্রকৃত পক্ষে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে প্রাণী হত্যা না করে বেঁচে  থাকা সম্ভব নয়। তাই চতুরায্য সত্যের প্রথম সত্যে বলা হয়েছে যে, বেঁচে থাকাটাই দুঃখ জনক। এইজন্য পঞ্চশীলের প্রথমশীলে প্রাণী হত্যার জন্য সরাসরি দায়ী হতে বারণ করা হয়েছে। এখানে সরাসরি কথাটি গুরুত্বপূর্ণ। প্রানীহত্যার বিষয়ে প্রাণীহত্যা হলো কিনা, তার চাইতে প্রাণী হত্যার জিঘাংসা চেতনাকে অধিকতর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এটিই প্রথমশীলের কুশল ব্যাখ্যা।
প্রশ্নঃ- মহাযানী বৌদ্ধেরা তো মাছ-মাংস খান না।
উত্তরঃ ঐ কথা সত্য নয়। চিনের মহাযানী বৌদ্ধেরা নিরামীষাশী হতে গুরুত্ব দেন বটে, তবে জাপান ও তিব্বতের মহাযানী বৌদ্ধ গৃহী এবং ভিক্ষুরাও মাছ মাংস খান।
প্রশ্নঃ- বৌদ্ধদের মাছ-মাংস খাওয়া উচিত না। এই সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কি?
উত্তরঃ মনে করুন, কোন ব্যক্তি নিরামিষভোজী হওয়া সত্ব্বেও জীবনাচরনে স্বার্থপর, অসদাচারী ও সংকীর্ণ। অন্য একজন নিরামীষভোজী নন, কিন্তু সদচারী, ত্যাগী ও করুণাপরবশ। এ দুজনের মধ্যে বৌদ্ধ হিসেবে কে উত্তম?
প্রশ্নকারীঃ জীবনাচরনে যিনি সদচারী তিনি অবশ্যই অপেক্ষাকৃত উত্তম।
উত্তর দাতাঃ কেন?
প্রশ্নকারীঃ কারণ ঐ ব্যক্তি আমিষভোজী হলেও সদাচারী।
উত্তরদাতাঃ প্রকৃতপক্ষে এই বিষয়টি প্রধান বিচায্য বিষয়। একজন নিরামিষাশী যেমন সদাচারী হতে পারেন, একজন আমিষভোজী তেমনি সদাচারী হতে পারেন। বুদ্ধ তাঁর হিতোপদেশে মানুষের চেতনার উপর সবচেয়ে অধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন। জগত জীবনে সবকিছুই আপেক্ষিক, এখানে চূড়ান্ত ও চরম বলে কিছুই নেই। বিষয়টি শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের আপেক্ষিক সূত্রের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ যা বৌদ্ধ দর্শনে মজ্ঝিমপন্থা সূত্র দিয়ে ব্যাখ্যাত হয়েছে।

কুশল প্রশ্নোত্তরঃ ধ্যান সমাধি- ভদন্ত এস. ধাম্মিকা

ধ্যান-সমাধি
প্রশ্নঃ- ধ্যান-সমাধি বা ভাবনা কি?
উত্তরঃ ধ্যান-সমাধি বা ভাবনা হলো, মনের কার্যকলাপ উন্নয়নের সচেতন প্রচেষ্টা। পালি ভাষায় ভাবনা অর্থ হলো গড়ে তোলা। বা বৃদ্ধি করা।
প্রশ্নঃ- ধ্যানের তাপর্য কি?     
উত্তরঃ ধ্যান বা ভাবনার গুরুত্ব অপরিসীম। আমরা যতই ভালো হতে চাই না কেন, তা সম্ভব হবে না, যদি আমাদের মনে স হবার সদা সচেতন প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা না হয়। উদাহারণ স্বরুপ বলা যায়, নিজ স্ত্রীর প্রতি অসহনশীল স্বামী প্রতিজ্ঞা করলেন, এখন থেকে তিনি স্ত্রীর প্রতিসহনশীল হবেন। কিন্তু পরমুহুর্তে স্ত্রীর সঙ্গে চেঁচামেচি শুরু করলেন। এর কারণ তার কার্যকলাপ সম্পর্কে তিনি মনকে প্রহরীর মত সদাসচেতন রাখেননি। ফলে তাঁর অজ্ঞাতেই তিনি ধৈয্য হারিয়ে ফেলেছেন। ভাবনা বা ধ্যান-সমাধি নিজের মনের উপর প্রহরীর মত সদা সচেতন থাকার শক্তি ও অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
প্রশ্নঃ- আমি শুনেছি, ধ্যান কখনো কখনো বিপদজ্জনক হতে পারে; তা কি সত্য?     
উত্তরঃ এর উত্তর এভাবে দেয়া যায়। বাঁচার জন্য আমাদের লবনের প্রয়োজন। কিন্ত আপনি যদি একসঙ্গে ১ কিলোগ্রাম লবন খেয়ে ফেলেন, তাহলে আপনার মৃত্যু ঘটবে। আধুনিক জীবন যাপনের জন্য গাড়ী প্রয়োজন। কিন্তু আপনি যদি ট্রাফিক আইন না মেনে গাড়ী চালান, তাহলে আপনার বিপদ হবে। ধ্যান-সমাধি বা ভাবনাও তদ্রুপ। আমাদের ধ্যান অনুশীলন প্রকৃত সুখ-শান্তির জন্য অপরিহায্য, কিন্তু সঠিকভাবে চর্চা না করলে সমস্য দেখা দিবে। অনেকের ভুল ধারণা হলো মানসিক চাপ, অমূলক ভীতি এবং স্কিজোপ্রেনিয়ার মতো অসুখ ধ্যান অভ্যাসে নিরাময় হয়। এই জাতীয় অসুখে প্রথমে বিশেষজ্ঞ চিকিসকের চিকিসা নেয়া উচিত। কিছুটা সুস্থ হবার পর ধ্যান অভ্যাস শুরু করতে হয়। শুরুতে অনেকক্ষণ ধ্যান করলে ক্লান্তি আসে। ক্যাঙারু ধ্যান আরও ক্ষতিকর। এই পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণের ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে, কখনও নিজে বই পড়া পদ্ধতিতে ক্যঙারুর মতো লাফিয়ে লাফিয়ে ঘন ঘন পদ্ধতি পরিবর্তন করে ধ্যান চর্চা করলে ক্ষতি হয়। কোন জটিল মানসিক রোগ না থাকলে ধ্যান সমাধি বা ভাবনা মানসিক উকর্ষ সাধনে অশেষ উপকার সাধন করে, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। আধুনিক চিকিসা বিজ্ঞানীদের মতে অনেক শারিরীক রোগ মানসিক কারণে সৃষ্টি হয়।
প্রশ্নঃ-  কত প্রকার ধ্যান পদ্ধতি আছে?    
উত্তরঃ বুদ্ধ বিভিন্ন পদ্ধতির ধ্যান শিক্ষা দিয়েছেন। এক পদ্ধতি এক রকম মানসিক সমস্যার সমাধান ও মানসিক উকর্ষ সাধনে সাহায্য করে থাকে। তবে দুপ্রকারের ধ্যান পদ্ধতি সব চাইতে বেশী উপকারী। এর একটি হলো সচেতন শ্বাস-প্রশ্বাস ভিত্তিক অর্থা আনাপানা স্মৃতি, অন্যটি হলো মৈত্রী ভাবনা বা মেত্তা স্মৃতি।
প্রশ্নঃ- আনাপানা পদ্ধতি কিভাবে করতে হয়?
উত্তরঃ আপনি পি অক্ষর দিয়ে শুরু  চার শব্দের চারটি সহজ ধাপে ধ্যান করতে পারেন। যেমন, প্রথম ধাপে প্লেস বা স্থান নির্বচন; এমন স্থানে বসে ধ্যান করতে হবে, যেখানে কোন গোলমাল নেই। দ্বিতীয় ধাপে পজিশন বা শরীরের অবস্থান-আরামদায়ক স্থানে হতে হবে। হাটু ভাঁজ করে আরামে কোলের উপরে বাম হাতের তালুর উপর ডান হাতের তালু রেখে, শির দাড়া (মেরুদন্ড) সোজা রেখে চোখ বন্ধ করে আসন নিন। এর বিকল্প অবস্থান হতে পারে চেয়ারে শিরদাড়া সোজা রেখে বসা। পা থেকে মাথার তালু পযর্ন্ত, নীচ থেকে উপরের দিকে পয্যায়ক্রমে প্রত্যক গিট, মাংসপেশী শিথিল করে আসন নিতে হবে। তৃতীয় ধাপে প্রাকটিস বা আসল ধ্যানানুশীলন- এতে নিশ্বাস-প্রশ্বাসের সময় শ্বাস ছাড়া(বিলয়) এবং শ্বাস নেয়া (উদয়) এর মধ্যে মনঃসংযোগ করা। শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে নাভির ওঠানামার মধ্যে অথবা শ্বাস-প্রশ্বাসের মধ্যে মনঃসংযোগ রাখতে পারেন। চতুর্থ ধাপে পোবলেম বা ধ্যানের সময় মনঃসংযোগে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন-শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চুলকানী অনুভব, হাটুতে ব্যাথা দেখা দিতে পারে। এতে নড়াচড়া না করে, অস্থির না হয়ে, যে জায়গায় চুলকাচ্ছে বা ব্যাথা করছে সেই হাটু বা স্থান শীথিলভাবে রাখার অনুভুতি আনতে হবে। কোথাও চুলকানো অপরিহায্য হলে মনঃসংযোগ সহকারে হাত তোলা, নেয়া, চুলকানো, আবার হাত যথাস্থানে ফিরিয়ে আনা, সবই মনঃসংযোগ সহকারে করতে হবে এবং যথাশীঘ্র পুনরায় নাভি ওঠানামার মধ্যে মনঃসংযোগ ফিরিয়ে আনতে হবে। এছাড়া অস্থির মন বিক্ষিপ্তভাবে এখানে-সেখানে, এবিষয় ওবিষয়ে ছোটাছুটি করে। তখন ধৈয্যের সাথে তড়াহুড়া না করে, মনঃসংযোগ যথাশীঘ্র নাভির ওঠনামার মধ্যে বারবার ফিরিয়ে আনতে হবে। এভাবে অনুশীলন করতে করতে, অনুশীলন অব্যাহত রাখলে ক্রমান্বয়ে অস্থির-বিক্ষিপ্ত চিত্ত বা ছোটাছুটি করা মন স্থির হয়ে আসবে, মনঃসংযোগ শক্তিশালী হয়ে ওঠবে এবং মনের গভীরে প্রশান্ত মুহুর্ত গুলোর উদয় হবে। এক কথায় আপাদমস্তক দেহ প্রশান্ত শীথিলতায় উপবিষ্ট আসনে অথবা শয্যায় সমর্পিত করে মনকে দেহের মধ্যে সংযুক্ত করে। দেহ মনের এ গতিবিধি পয্যবেক্ষণের নাম ধ্যান, ভাবনা বা সমাধি।
প্রশ্নঃ- কতক্ষণ ধ্যান করা উচিত?   
উত্তরঃ প্রথম সপ্তাহে প্রতিদিন ১৫ মিনিট। তারপর প্র্রতি সপ্তাহে ৫ মিনিট করে বাড়াতে থাকুন। এভাবে প্রতি দিন ৪৫ মিনিট করে ধ্যান্ভ্যাস এবং নিয়মিত ধ্যানানুশীলন করলে অনুভব করবেন আপনার মনসংযোগের সময়সীমা বৃদ্ধিলাভে মনের বিক্ষিপ্ত ছোটাছুটি, অস্থিরতা হ্রাস পাচ্ছে, ক্রমান্বয়ে আপনি মনের ও শরীরের শিথিল, প্রশান্ত অনুভূতিপূর্ণ মুহুর্তের সন্ধান পাচ্ছেন।
[*** আপনি যদি এমন ব্যক্তির সন্ধান পান, যিনি অনুসন্ধানী দৃষ্টিনিয়ে আপনার ভুল-ভ্রান্তি সংশোধন করতে আগ্রহী সেই ব্যক্তিই আপনার কল্যাণমিত্র।]
প্রশ্নঃ- মেত্তাভাবনা ধ্যান কিভাবে করতে হয়?
উত্তরঃ আনাপানা পদ্ধতির ধ্যানাভ্যাস রপ্ত হবার পর মেত্তাভাবনা পদ্ধতির ধ্যান শুরু করতে হয়। আনাপানা পদ্ধতিতে ধ্যান করার পর মেত্তভাবনা পদ্ধতি শুরু করবেন। এটি সপ্তাহে ২/৩বার করতে পারেন। এই পদ্ধতি হলো- প্রথমে নিজের উদ্দেশ্যে মনে মনে বলুন, আমি যেন ভালো থাকি, সুস্থ থাকি, ধীর-স্থির থাকি, বিপদমুক্ত, রোগমুক্ত ও শত্রুমুক্ত হই; আমার মন দ্বেষমুক্ত হোক, অন্তর মৈত্রী-করুণাময় হোক। এরপর অনুরুপ মঙ্গল কামনা প্রথমে আপনার প্রিয়(বাবা-মা, শিক্ষাগুরু, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন,বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী) ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে, তারপর নিরপেক্ষ (আপনার প্রিয়ও নয় অপ্রিয়ও নয়) ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে, সবশেষে আপনার পছন্দ নয় এমন ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে করুন। মনে মনে বলুন, এরা সবাই যেন নিজের মতো সুখে-শান্তিতে বসবাস করেন।

প্রশ্নঃ- মেত্তভাবনার উপকারীতা কি?
উত্তরঃ আপনি আন্তরিক অনুভূতি নিয়ে সবার মঙ্গল কামনা করলে, নিজের মধ্যে প্রশান্তিময় এক শুভ চেতনা অনুভব করবেন। দেখতে পাবেন, আপনি সবার কাছে ক্রমশঃ গ্রহণযোগ্য, ক্ষমাশীল হয়ে উঠেছেন, আপনার প্রিয় ব্যক্তিদের প্রতি আপনার ভালবাসা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যাদের প্রতি আপনি উদাসীন ছিলেন, আপনার ক্ষোভ ও বৈরীভাব ছিল, তাদের প্রতি অকুশল ভাব হ্রাস পেয়ে করুণা-উপেক্ষা-মৈত্রী ভাবের উদয় হচ্ছে। এসনকি গভীর মনোসংযোগের ধ্যানে কোন রোগীকে অন্তঃর্ভূক্ত করলে রোগীর অবস্থার উন্নতি ঘটবে।

প্রশ্নঃ- ঐ ব্যাপারটি কিভাবে সম্ভব হয়?
উত্তরঃ মনকে সম্যকভাবে ধ্যানের একাগ্রতায় সংগঠিত করতে সফল হলে, মন এক শক্তিশালী যন্ত্রের মত শক্তি সঞ্চয় করে। মনের ঐ শক্তিকে অন্যের প্রতি যথার্থভাবে প্রয়োগ করতে সফল কাম হলে তা কায্যকরী হয়ে উঠে। আপনার এমন অভিজ্ঞতাও থাকতে পারে, অনেক লোকের ভীড়ের মধ্যে আপনি অনুভব করছেন, কেউ আপনাকে লক্ষ্য করছেন। এর কারণ, আপনার মননশক্তি ঐ ব্যক্তির গ্রাহক যন্ত্র হিসেবে কাজ করছে। এটি মেত্তাভাবনার প্রভাব যা ভাবনাকারী পয্যবেক্ষণ করবেন।

প্রশ্নঃ- ধ্যান শিক্ষার জন্য কি কোনও শিক্ষকের প্রয়োজন?
উত্তরঃ শিক্ষক অপরিহায্য নয়। তবে অভিজ্ঞ ব্যক্তির নির্দেশ অবশ্যই সাহায্য করে। দুর্ভাগ্য বশতঃ অভিজ্ঞ শিক্ষক পাওয়া যায় না। ভালভাবে অনুসন্ধান করে প্রশিক্ষক নির্বাচন করা উচিত। তা না হলে বিপরীত ফল হতে পারে।
প্রশ্নঃ- শোনা যায় মনস্তত্ববিদ কিংবা মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা সম্প্রতি তাদের কাজে ধ্যান পদ্ধতি ব্যবহার করছেন; একথা কি সত্য?
উত্তরঃ কথাটি সত্য। সম্প্রতি রোগ চিকিসায় ধ্যান-পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। বিশেষতঃ আত্মসচেতনতা সৃষ্টি, অমূলক ভীতি দূরীকরণ কিংবা দুচিন্তাগ্রস্থ রোগীর প্রশান্তি প্রদানের জন্য। বুদ্ধের আবিষ্কৃত বিশ্লেষনধর্মী মনের তথ্য অদ্যাবধি মানুষকে অজ্ঞানজনিত দুঃখ থেকে মুক্তি দিয়ে অপ্রমেয় শান্তি প্রদান করে যাচ্ছে।
[*** যে ব্যক্তি অন্যকে সশিক্ষার উপদেশ দেন এবং অকুশল কর্ম থেকে বিরত রাখেন তিনি সলোকের প্রিয় ও অসলোকের বিরাগভাজন হন।]
[*** যিনি অকুশল কর্ম করেছেন, তিনি যেন পুনর্বার তা না করেন, তিনি যেন কুশল কর্মে আনন্দ এবং অকুশল কর্মে দুঃখবোধ করেন।]