সৌভাগ্য ও অদৃষ্ট- ভদন্ত এস ধাম্মিকা


প্রশ্নঃ- তান্ত্রিকতা ও ভাগ্যগণনা সম্পর্কে বুদ্ধর অভিমত কি?
উত্তরঃ ভাগ্য গণনা, রক্ষাকবচ এবং গৃহনির্মাণ ও যাত্রায় শুভ অশুভ দিন ধায্যকরণকে বু্দ্ধ অর্থহীন কুসংষ্কার আখ্যায়িত করে তাঁর অনুসারীদের এই আচারাদি পালন করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।
প্রশ্নঃ- এতে কোনও সত্যতা না থাকলে অনেকে কেন তান্ত্রিকতা বিশ্বাস ও চর্চা করেন?
উত্তরঃ লোভ, ভয় ও অজ্ঞতার কারণে এগুলির চর্চা করা হয়। বুদ্ধের উপদেশ গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে বুঝা যায়, এক টুকরা কাগজ, ধাতব মুদ্রাখন্ড, কিংবা অন্য কোনও পাথর কণা অপেক্ষা মানুষের মহহৃদয়বৃত্তিজাত কুশলকর্ম অনেক বেশী শক্তিশালী। বুদ্ধের গভীর সাধনালব্দ বাস্তব অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান-আলোকে মানুষ সদাচার, করুণা, ক্ষমা, ধৈয্য, ত্যাগ ও সততাধর্মী জীবনাচারের সাহায্যে প্রকৃতপক্ষে অশুভ ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে পারেন। তাই তান্ত্রিকতার আচার অনুষ্ঠানকে তিনি নিম্নমানের বৃত্তি বা জীবীকা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
প্রশ্নঃ- কিছু তান্ত্রিকতা কায্যকরী বলে শোনা যায়, তাই নয় কি?
উত্তরঃ লক্ষ্য করবেন, যাঁরা ঐ পন্থায় জীবিকা নির্বাহ করেন, তাদের দাবি হলো ভাগ্য পরিবর্তন করে তারা সৌভাগ্যের গ্যারান্টি দিতে পারেন। তাই যদি সত্যি হয়, তাহলে তারা নিজেরা কেন বিপুল সম্পত্তির অধিকারী নন?  তাঁরা কেন নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারেন না? কেন প্রতি সপ্তায় লটারী জিতে মোটা অর্থ লাভ করেন না? আসল কথা হলো তাদের এইটুকু ভাগ্য যে, কিছু বোকা বা অজ্ঞ মানুষ পাথর কিংবা রক্ষাকবচ ক্রয় করে তাদের জীবিকা অর্জনে সাহায্য করেন। এখানে সাধারণ মানুষের মনে অলীক বিশ্বাস ও মোহ সৃষ্টি করে তা স্বার্থসিদ্ধির কজে লাগানো হয়।
প্রশ্নঃ- ভাগ্য বলে কি কিছুই নেই?
উত্তরঃ ভাগ্য বিশ্বাসীরা বিশ্বাস করেন, এমন অদৃশ্য শক্তিকে, যা খেয়াল খুশিমত মানুষের ভাল-মন্দ নির্ধারণ করে থাকে। কিন্তু বৌদ্ধ দর্শন ও বিজ্ঞানের কার্যকারণ প্রক্রিয়া মতে জগত জীবনে সুনিদিষ্ট কারণ ছাড়া কোন ঘটনা ঘটে না। এখানে ব্যক্তি বিশেষের প্রতি পক্ষপাতিত্বের কোন অবকাশ নেই। দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষ জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে রোগাগ্রস্ত হয়। এখানে সুনির্দিষ্ট রোগ হলো ঘটনা; সুনির্দিষ্ট রোগ জীবাণু এবং দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতা হলো কারণ। চিকিসার সাহায্যে কারণ দূর করলে রোগ নিরাময় হয়। এখানে রোগ জীবাণু ও ঔষধ এই দুইটি জাতি-ধর্ম-সম্প্রদায়ের ভেদাভেদ করে না। তান্ত্রিক শাস্ত্রের কোন কাগজের টুকরো বা ধাতব পদার্থ খন্ড, কিংবা পাথরে লিখা কোন ধর্মীয় বাণী কিংবা পাঠ করে মন্ত্র ধারণ করলেরোগ প্রতিরোধ বা নিরাময়ে কার্যকরী হবার কোন কারণ নেই। মানুষের কুশল অকুশল ঘটনার কারণ হলো- মানুষের কৃত কুশল-অকুশল জীবনাচরণধর্মী কর্ম। যাঁরা অলৌকিকতার ভাগ্যে বিশ্বাস করেন, তাঁরা সাধারণতঃ অনিয়ন্ত্রিত অর্থ-সম্পদের চাহিদার পেছনে অন্তহীন অসন্তুষ্টি নিয়ে ছুটে চলেন। বুদ্ধ বলেছেন, সুশিক্ষিত, সুদক্ষ, বিভিন্ন বিষয়ে সুনিপুণ এবং সুভাষী হওয়া উত্তম মঙ্গলকারক, পরম সৌভাগ্যদায়ী।
মাতা-পিতার সেবা, স্ত্রী-পুত্র-কন্যার ভরণ পোষন, সাধাসিধে জীবন যাপন করা উত্তম মঙ্গল, পরম সৌভাগ্যদায়ী।
ত্যাগী হওয়া, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, অভাবগ্রস্তদের সাহায্য এবং নিদোর্ষ কর্মসম্পাদন করা উত্তম মঙ্গল, পরম সৌভাগ্যদায়ী।
কৃতজ্ঞ, সন্তুষ্ট, শ্রদ্ধাবান, বিনম্রী মানবতাবোধ হওয়া, সদ্ধর্ম শ্রবণ করা উত্তম মঙ্গল এবং পরম সৌভাগ্য দায়ী। উক্ত কর্মক্রিয়াই মানুষের শুভ-অশুভ ফলাফল প্রদান করতে সক্ষম; অন্য কিছু নয়
[*** অসবন্ধুর সঙ্গ বর্জন করো, সবন্ধুর সঙ্গলাভ করো,মহব্যক্তির সংস্পর্শে গমন করো।***
*** যিনি পন্ডিত ও প্রবীন ব্যক্তিদের সম্মান ও শ্রদ্ধা করেন, তিনি দীর্ঘায়ু, যশ, সুখ, শান্তি- সম্পদ লাভ করেন।***]
........................................................................................................

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন