প্রশ্নঃ-
বৌদ্ধ দর্শনে কি জীবনাচরণের কোনও নীতিমালা আছে?
উত্তরঃ অবশ্যই আছে। পঞ্চশীলই
বৌদ্ধ জীবনাচরণের নীতিমালা। পঞ্চশীলের প্রথম শীলে কোন জীবহত্যা কিংবা কোনও
প্রাণীর শারিরীক ও মানসিক আঘাত করা হতে বিরত
থাকতে উপদেশ দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয়
শীলে প্রাপ্য নয়, এমন
কোন বস্তু নিজের অধিকারে
আনা হতে বিরত থাকার;
তৃতীয় শীলে, যে
কোন প্রকারের যৌন অনাচার থেকে বিরত
থাকার;
চতুর্থ শীলে, নিজের
ও অন্যের ক্ষতি করতে পারে এমন বাক্যালাপ থেকে
বিরত থাকার এবং পঞ্চম শীলে, মদ্যপান
কিংবা শারিরীক ও মানসিক ক্ষতি করতে
পারে ঐরূপ খাদ্য গ্রহণ থেকে
বিরত থাকতে উপদেশ দেয়া হয়েছে।
[অপরের দোষের দিকে,
অপরের
কৃতকর্ম সম্পূর্ণ বা অসম্পূর্ণ ভাবে সম্পাদিত হলো কিনা, তার দিকে
দৃষ্টি দেয় না। শুধুমাত্র
নিজের কর্ম সম্পূর্ণ বা অসম্পূর্ণভাবে সম্পন্ন হলো কিনা তার দিকে মনোনিবেশ করা,
এবং
বিচার বিশ্লেষণ করা উচিত।]
প্রশ্নঃ-কিন্তু মাঝে মাঝে প্রাণী
হত্যা করা ভালো। যেমনঃ রোগ
সংক্রমণকারী কীট অথবা
কেউ যদি
আপনাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়, তাহলে
তাকে হত্যা করা কি উচিত নয়?
উত্তরঃ কাউকে হত্যা করা আপনার জন্য ভালো
হতে পারে, কিন্তু যাকে
হত্যা করা হলো তার
অবস্থা কল্পনা করুন। আপনার মতো সেই প্রানীটিও বাঁচতে
চায়। রোগ সংক্রমণকারী
কীট মারার মধ্যে মিশ্রিত কর্মফল বিদ্যমান। এখানে
আপনার উপকার সেই
প্রাণীর জন্যে অপকারী(মন্দফল) ফল বিদ্যমান। দৃষ্টান্ত
স্বরূপ উল্লেখ করা যায়- চলার পথে জীবন্ত কেঁচোকে রজ্জুখন্ড ভেবে পায়ে মাড়ালে
প্রাণী হত্যার অকুশল
কর্ম হবে না। পক্ষান্তরে জড় রজ্জুখন্ডকে জীবন্ত কেঁচো
ভেবে পায়ে মাড়ালে প্রাণী
হত্যার অকুশল কর্ম বলে গণ্য হবে।
কখনো কখনো প্রাণী হত্যার প্রয়োজন হতে পারে
বটে তবে তা কখনো সর্বাঙ্গীন ভাল কর্ম
নয়। প্রকৃতপক্ষে
কায়মনো বাক্যে কৃত সকল কর্মে বুদ্ধ চেতনাকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। হত্যার
চেয়ে জিঘাংসা মনোবৃত্তি এখানে তাৎপর্যপূর্ণ। যেমন রোগ-চিকিৎসায়
জীবণু বিনাশী ঔষধ ব্যবহারের সময় জীবাণু বিনাশী জিঘাংসার চেয়ে রোগ নিরাময় চেতনা মুখ্য থাকে।
প্রশ্নঃ-
আপনারা বৌদ্ধরা কীট-পতঙ্গ নিয়ে
অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করেন, তাই
নয় কি?
উত্তরঃ বৌদ্ধ দৃষ্টিকোণে ছোট-বড় নির্বিশেষে
সকল প্রাণীর প্রতি মৈত্রী করুণা বৌদ্ধিক দৃষ্টিতে
সমগ্র বিশ্ব্ প্রকৃতিকে পরস্পর নির্ভরশীল ও একক মনে করা হয়। বিশ্ব প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় প্রত্যেক
জড়-জীবের সুনির্দিষ্ট ও প্রয়োজনীয় ভূমিকা
আছে। তাই বিশ্ব প্রকৃতির এই ভারসাম্য ছিন্ন করার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। একটু
লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন, যাদের
জীবনাচরণে প্রাকৃতিক
সম্পদ শুধু ব্যবহার করে নিশেষ করার প্রবণতা আছে, কিন্তু পুনঃপ্রতিষ্ঠায়
সংরক্ষণের উদ্যোগ নেই, প্রকৃতির
প্রতিশোধ মূলক রুদ্ররোষে পড়তে হয় তাদের। ভারসাম্য
নষ্ট করার ফলে বায়ুমন্ডল দুষণ, জল
বিষাক্ত হয়ে নদ-নদী
নিশেষ, মনোমুগ্ধকর
পশুপাখীর বিলুপ্তি, পাহাড়-পর্বতের
মালভূমি ও কৃষিভূমি ধসে
নিষ্ফলা, এমনকি ঋতুচক্রও
পরিবর্তন হয়ে যায়। মানুষ যদি কিঞ্চিত সহণশীল হয়ে পরিস্থিতির
কথা বিবেচনা করে প্রাণী নিধন, বনসম্পদ
উজাড় পাহাড়-পর্বত ধ্বংস
করা থেকে বিরত থাকে এই ভয়ংকর অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে না।
জীবজগতের প্রতি
আমাদের উচিত আরও অধিক মমত্ববোধ গড়ে তোলা। এই বিষয়টি পঞ্চশীলে বিধৃত হয়েছে।
প্রশ্নঃ-
পঞ্চশীলের তৃতীয় শীলে যৌন অনাচার
থেকে বিরত থাকার উপদেশ দেয়া হয়েছে। যৌন
অনাচার কি?
উত্তরঃ ছল-চাতুরী, ভাবাবেগের কৌশলে কিংবা ভয়-ভীতি
প্রদর্শনে যৌনসংগম হলো যৌন অনাচার। বিয়ের
সময় স্বামী-স্ত্রী উভয়ে নিজেদের যৌনাচার সম্পর্কে বিশ্বস্ত থাকার অঙ্গীকারাবদ্ধ হন। এর
লঙ্ঘনে অবিশ্বস্ততার অপরাধে দোষী হিসেবে গণ্য
হতে হয়। যৌন মিলন হলো
স্বামী-স্ত্রী দুজনের মধ্যে প্রেম-ভালবাসা,
আন্তরিকতা ও
মানসিক ভাবাবেগের বহিঃপ্রকাশ। সম্প্রতি এইডস রোগের
বিশ্বব্যাপী মারাত্মক প্রকোপ
এই শীল ভঙ্গের কর্মফল।
[অস্থির-অশান্ত
ও চঞ্চল মনের নিয়ন্ত্রণ
সহজ নয়। জ্ঞানী
ব্যক্তি তীরন্দাজের তীর দিয়ে লক্ষ্যবস্তু স্থির করার ন্যায় মনকে লক্ষ্যের মধ্যে
স্থির রাখেন]
প্রশ্নঃ-
বিয়ের আগে যৌন
সংগম কি যৌন অনাচার?
উত্তরঃ
দু'জনের
মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া
ও ভালবাসা থাকলে তা যৌন অনাচার রূপে
গণ্য হতে পারে না বটে, কিন্তু প্রাকৃতিক বিধানে যৌন মিলনের
উদ্দেশ্য হলো সৃষ্টির উদ্দেশ্যে জৈবিক প্রজনন। অবিবাহিত নারী
অন্তঃসত্তা হলে কি ভয়াবহ সমস্যার সম্মুখীন অথবা প্রাকৃতিক বিধানে কি শাস্তি পেতে হয়, তা মনে রাখ অবশ্য কর্তব্য।
অভিজ্ঞ বিবেকবান মনিষীদের উপদেশ হলো
বিয়ের আগে যৌন সংগম হতে বিরত থাকা মঙ্গলজনক। এইরূপ
অসংযত জীবনাচারের ফলে অনেকে যৌন ব্যাধির শিকার হচ্ছেন।
........................................................................................................
ভন্তে কামেসু মিচ্চাছারা এই শীল ভংগ হতে কয়টা কারন লাগে
উত্তরমুছুন