প্রশ্নঃ- মানুষ কোথা থেকে আসে, কোথায় যায়?
উত্তরঃ এর তিনটি সম্ভাব্য উত্তর হতে পারে। ঈশ্বরে বিশ্বাসীরা দাবী করেন,
জন্মগ্রহণের আগে জীবনের অস্তিত্ব থাকে না, ঈশ্বরের ইচ্ছায় তার সৃষ্টি হয়। জন্মের
পর জীবন যাপন, এবং পরিশেষে মৃত্যুর পর ব্যক্তিসত্বার অনন্ত কালের স্বর্গে কিংবা
নরকে গমন হয়। অন্যদিকে বিজ্ঞানীরা দাবী করেন, প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াতে মানুষের জন্ম
হয় এবং জীবনকাল অতিবাহিত হবার পর প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মৃত্যুতে সম্পূর্ণ
বিলুপ্ত হয়ে যায়। বৌদ্ধেরা ঐ দুটির কোনটিই বিশ্বাস করেন না।
প্রথম ব্যাখ্যায় নীতিগত ত্রুটি এই যে, ঈশ্বর যদি সৃষ্টি করেন, তাহলে কোন
কোন মানুষ কেন নানা পঙ্গুত্ব নিয়ে জন্ম গ্রহণ করেন, কেন কিছু ভ্রুণের গর্ভপাত হয়,
কেনইবা মৃত সন্তানের জন্ম হয়। এছাড়া ৬০/৭০ বছরের জীবনব্যাপী কৃতকর্মের শাস্তি
কিংবা পুরষ্কার রূপে কেন অনন্তকাল ধরে নরক যন্ত্রণা কিংবা স্বর্গে সুখ ভোগ করতে হয়। এটি
যুক্তি সঙ্গত নয়।
দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটি প্রথমটি অপেক্ষা যুক্তিসঙ্গত মনে হলেও এতে কিছু
অমীমাংসীত প্রশ্ন থেকে যায়।
মনোবিজ্ঞানীদের অভিমত, বিশ্বব্রহ্মান্ডে মানুষের মস্তিষ্কের মত এত জটিল প্রত্যঙ্গ এখনও সৃষ্টি হয়নি। জীবপ্রকৃতির এই
মনুষ্য প্রজাতির ডিম্বানু ও শুক্রানুর সমন্বয়ে কিভাবে এত জটিল চিত্ত চেতনা
কাযর্ক্রম প্রক্রিয়ার জন্ম হতে পারে?
কি করে আধুনিক বিজ্ঞান শাখার “টেলিপ্যাথি” ও “প্যারাসাইকোলজি”
সংক্রান্ত মনের ক্রিয়াকলাপ ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। এই জটিল প্রশ্ন অমীমাংসীত থেকে
যায়। মানুষের পূবর্র্ত জন্ম সম্পর্কে বৌদ্ধ দর্শনের ব্যাখ্যা হলো, জন্ম থেকে
মৃত্যু আবার কর্ম অজির্ত ব্যক্তিসত্ত্বার মননশীলতা, প্রবণতা, মুখ্যতার চারিত্রিক
বৈশিষ্ট্য মৃত্যুর পর কায্যকারণ প্রক্রিয়ায় যথোপযুক্ত ডিম্বাণুতে সম্পৃক্ত হয়, যা
নিষিক্ত হয়ে পুনজর্ন্ম লাভ করে। নতুন ব্যক্তি সত্ত্বায় পূরব জীবনে অর্জিত মননশীলতা, মা-বাবার
জিন্-গত প্রভাব, পারিবারীক, সামাজিক, প্রশিক্ষণ, বর্তমান জীবনের ব্যক্তিসত্ত্বা
গঠনে প্রভাব ফেলে। এভাবে জন্ম-মৃত্যুর প্রক্রিয়া চলতে থাকে যতদিন জন্মপ্রবাহের
উপাদান ভবতৃঞ্চা বিদ্যমান থাকবে। প্রজ্ঞার আলোকে জীব সত্ত্বার স্বরূপ উপলদ্ধিতে জন্মপ্রবাহের
উপাদান ভবতৃঞ্চা বিলুপ্ত হলে মননশীলতার এমন স্তর অজির্ত হতে পারে, যেখানে সত্ত্বার
সুখ-দুঃখ-বেদনা একাকার হয়ে নিবার্ণপিত হয়। ফলে
পুনজর্ন্ম রুদ্ধ হয়। সুখ-দুঃখ, আশা-হতাশা, যশঃ-অযশঃ, নিন্দা-প্রশংসায়
অকম্পিত প্রশান্তিতে বিলীন প্রাপ্ত মানসিক এই অবস্থার নাম নিবার্ণ। নিবার্ণই
বৌদ্ধিক ব্যক্তির একমাত্র লক্ষ্য।
প্রশ্নঃ- মনের তো কোন
বস্তুসত্ত্বা নেই, কি করে মন এক দেহ থেকে অন্য দেহে স্থানান্তরিত হতে পারে?
উত্তরঃ মানসিক
প্রবাহ দেহ থেকে দেহান্তরে যাবার প্রক্রিয়াকে বেতার তরঙ্গের সঙ্গে তুলনা করা যায়।
বেতার তরঙ্গে কোন শব্দ বা সঙ্গীত-রাগ থাকে না; থাকে শক্তি তরঙ্গ, যা কস্মিক শক্তি
হিসেবে প্রবাহিত হয়ে গ্রাহক যন্ত্রে যুক্ত হয়ে শব্দ কিংবা সঙ্গীত হয়ে প্রচারিত হয়।
অনুরূপ কার্যকারণ
প্রক্রিয়াতে মৃত্যুর পর ব্যক্তি সত্ত্বার মননশক্তি সুনির্দিষ্ট
ডিম্বানুতে আকৃষ্ট হয়ে ভ্রুণ বৃদ্ধিলাভ করে। বৃদ্ধিপ্রাপ্তির সময় মস্তিষ্কের
সাহায্যে নতুন ব্যক্তি সত্তা সংগঠিত হয়ে জন্মলাভ করে।
প্রশ্নঃ- মৃত্যুর পর কি মানুষ হয়ে
সবার জন্ম লাভ হয়?
উত্তরঃ কোন
ব্যক্তিসত্তার কোথায় জন্মলাভ হবে, তা কার্যকারণ
প্রক্রিয়ায় নির্ধারিত হয়। কেউ স্বর্গ সুখ, কেউ নরক যন্ত্রণা, আবার কেউ তৃঞ্চার্ত
লোভচিত্ত নিয়ে জন্ম নেয়। প্রকৃতপক্ষে
স্বর্গ-নরক রূপে কোন আলাদা ভৌগলিক অবস্থান নেই।
এটি শারিরীক ও মানসিক চেতনাগত জীবনানুভূতি। স্বর্গসুখানুভূতিও নরকদুঃখানুভূতির
মেয়াদ সীমীত। মেয়াদ শেষে কার্যকারণ
প্রক্রিয়ায় কর্মার্জীত জীবন নিয়ে
হয় জন্মলাভ, যা মানুষ রূপেও হতে পারে।
প্রশ্নঃ- সত্তার কোথায় পুনজর্ন্ম হবে, তা
কিসের উপর নির্ভর করে?
উত্তরঃ কৃতকর্মই
এর নির্ধারক। কর্ম বলতে আমাদের সচেতন মনোগত ক্রিয়া কর্মকে বুঝায়। অতীত জীবনের
কমর্ফলে বতর্মান জীবনের এবং বতর্মান জীবনের কমর্ফলে ভবিষ্যত জীবনের অবকাঠামো তৈরী
হয়। মৈত্রী-করুণার আদর্শ চর্চায় ব্যক্তিসত্তার মধ্যে স্বর্গসুখ নিয়ে পুনর্জন্মের প্রবণতা,
আর দুচিন্তাগ্রস্থ, নির্দয়, কামাসক্ত ব্যক্তি
সত্তার মধ্যে নরকযন্ত্রণা নিয়ে পুনর্জন্মের প্রবণতা
বিদ্যমান থাকে। বতর্মান জীবনের প্রবল
মননশীলতা পরবর্তী জীবনে প্রবাহমাণ থাকে। তবে অধিকাংশ মানুষের মনুষ্য জীবন নিয়ে পুনর্জন্মের সম্ভাবনা
থাকে। অতীত জীবনের কর্মফল বতর্মান জীবনের এবং বতর্মান জীবনের কমর্ফল ভবিষ্যত
জীবনের অবকাঠামো তৈরী করে। একে অনেক সময় “অদৃষ্ট” বলে
অপব্যাখ্যা করা হয়ে থাকে।
প্রশ্নঃ- আমাদের জীবন কি কোনও
অদৃশ্য শক্তির দ্বারা প্রভাবিত নয়? শুধু কর্ম
দিয়েই পরিবর্তিত ও
প্রভাবিত হয়?
উত্তরঃ আপন কর্মফল ছাড়া
কোনও অদৃশ্য শক্তির এতে কোনও ভূমিকা নেই। কৃতকর্মের সাহায্যেই জীবন পরিবর্তন করা
যায়। এই কারণেই আর্য অষ্টাঙ্গীক মার্গের একটি
কমর্পন্থা হলো, সম্যক ব্যায়াম বা চেষ্টা। এই কর্মপ্রচেষ্টা কোন
ব্যক্তির আন্তরিকতা কত প্রবল, তার উপর নির্ভর করবে এর ফলাফল। অনেকে আছেন যারা আপন
মন্দ স্বভাব বদলাতে উদ্যোগী নন, পূর্ব কর্ম নির্ধারিত দুঃখ
থেকে মুক্তি পেতে সচেষ্ট নন; আবার অনেকে আছেন, যাঁরা অকুশলকর্ম বর্জন করে
কুশলকর্মে ব্রতী হন। স্বভাব বদলানোর জন্য ধ্যান অপরিহার্য। কুশল কর্মে
উদ্যোগ এবং অকুশল কর্ম বর্জনে সুফল লাভ হয়। একজন বৌদ্ধের
লক্ষ্য হলো, নিজেকে দোষমুক্ত রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়
অতীত জীবনে আপনার স্বভাবে যদি ধৈর্য, দয়ার অনূভূতি প্রবল
থাকে তাহলে বর্তমান জীবনে সেই স্বভাব প্রবল থাকবে। বতর্মান জীবনে সেই গুণাবলীর আরও
অনুশীলনের ফলে তা অধিকতর প্রবল হয়ে বিকাশ লাভ করবে। তবে এ কথা সত্য যে, দীর্ঘদিনের পুরাতন
স্বভাব বদলানো কষ্টকর। যা একমাত্র ধ্যানের সাহায্যে আয়ত্ত করতে হয়। ধৈয্যশীল ও
দয়াবান মানুষের সুসম্পর্ক থাকে সবার সঙ্গে। ফলে তিনি সবার মধ্যে সম্মানিত হয়ে
সুখীজীবন যাপন করেন। অন্য একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার হতে পারে। মনে
করুন আপনি অতীত জীবনে ধৈয্যশীল, দয়াবান, মৈত্রীভাবাপন্ন ছিলেন। বতর্মান জীবনে সেই
গুণাবলীর প্রভাব নিয়ে আছেন; কিন্তু সেই গুণাবলীর অনুশীলন করে যদি আরও বিকাশ সাধনে
উদ্যোগী না হন, তাহলে ক্রমশঃ ঐ গুণাবলীর লোপ পাবে। আপনার মধ্যে খিটখিটে মেজাজ,
রাগ, নিষ্ঠুরতা ইত্যাদি প্রবল হয়ে দেখা দিবে। পক্ষান্তরে অতীত জীবনের খিটখিটে
মেজাজ, রাগ, নিষ্ঠুরতা ইত্যাদি বর্জন করার অনুশীলনের ফলে কুশল গুণাবলী অর্জনে সফল হলে
সুফল পাবেন, ব্যর্থ হলে কুফল ভোগ করবেন।
বলাবাহুল্য উক্ত সুফল-কুফল
প্রাপ্তি, কার্যকারণ প্রক্রিয়াতে সংঘটিত হয়। এখানে
অদৃশ্য দ্বিতীয় অলৌকিক শক্তির কোন ভূমিকা নেই।
প্রশ্নঃ- আপনি পুর্নজন্ম সম্বন্ধে
অনেক কথা বলেছেন এর স্বপক্ষে কোন প্রমাণ
আছে?
উত্তরঃ এর
স্বপক্ষে গ্রহণযোগ্য বৈজ্ঞানিক প্রমাণ আছে। অতীত জীবনের স্মৃতি নিয়ে জন্মলাভের
প্রকাশিত খবর নিয়ে গত প্রায় ৩০ বছর ধরে মনোবিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন। উদাহরন স্বরূপ
উল্লেখ্য, ইংল্যান্ডের ৫ বছর বয়সী একজন মেয়ে পোল্যান্ডে তাঁর অতীত জীবনের মা-বাবার,
সেখানকার বাড়ীর ঠিকানা খুঁজে পেয়েছেন এবং কিভাবে ২৩ বছর
বয়সে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ২ দিন পর মারা যান, তার নিখুঁত বর্ণনা দেন।
মনোবিজ্ঞানীরা বিভিন্নভাবে তাকে প্রশ্ন করে ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হন।
এটিই একমাত্র ঘটনা নয়। ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান
বিভাগের অধ্যাপক আইয়েন ষ্টিভেশন্ তাঁর রচিত গ্রন্থে অনুরূপ কয়েক
ডজন ঘটনার উল্লেখ করেছেন, যাতে বৌদ্ধদর্শনে ব্যাখ্যাত
পূনর্জন্মের সত্যতা প্রমাণ করে।[সূত্রঃ ইউনিভাসিরটি প্রেস অব ভাজির্নিয়া, চারলোটেভিলি,
ইউ, এস, এ, ১৯৭৫ পুনজর্ন্ম সম্পর্কিত ২০টি ঘটনা]
প্রশ্নঃ- কেউ কেউ মনে করেন অতীত
জীবনের স্মৃতির ব্যাপারটি ভৌতিক হতে পারে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?
উত্তরঃ কেউ কোন
বিষয়ে বিশ্বাস করেন না- এই অজুহাতে বিষয়টিকে ভৌতিক ব্যাপার বলে উড়িয়ে দিতে পারেন
না। কোন বিষয়ে ভিন্নমত পোষনের স্বপক্ষে আপনার উচিত গ্রহণযোগ্য প্রমাণ দেয়া। ভৌতিক
কারসাজির স্বপক্ষে কোন প্রমাণ নেই। ভৌতিক ব্যাপারটি কুসংষ্কারের অন্ধবিশ্বাস।
প্রশ্নঃ- আপনি বলেছেন ভৌতিক
কারসাজি কুসংস্কার। পুনজর্ন্মের ব্যাপারটি কি কুসংস্কার নয়?
উত্তরঃ অভিধানিক
অর্থে কুসংষ্কার হলো এমন ধারণা যার
স্বপক্ষে কোন যুক্তি নির্ভর তথ্যপ্রমাণ নেই। এটি ভোজবাজী ম্যাজিকের মতো। ভৌতিক ঘটনাগুলো প্রমাণের
স্বপক্ষে কোন বৈজ্ঞানিক বা বাস্তব অভিজ্ঞতা ভিত্তিক তথ্য-প্রমাণ নেই তাই এটি
কুসংষ্কার। কিন্তু পূনজর্ন্ম সম্পর্কে পূর্বোল্লিখিত সমীক্ষা বাস্তব
অভিজ্ঞতায় প্রমাণিত ও বিজ্ঞান সম্মত। অতএব কুসংষ্কার বলে এটি উড়িয়ে দেয়া যায় না।
প্রশ্নঃ- এমন কোন বিজ্ঞানী আছেন যিনি পূর্বজন্মে
বিশ্বাস করেন?
উত্তরঃ আছেন।
থমাস্ হাক্সলের নাম উল্লেখ করতে পারি। এই বিজ্ঞানী উনবিংশ শতাব্দীর বৃটিশ বিজ্ঞান
গবেষণার পথিকৃত। ডারউন তথ্যের সত্যতা তিনি প্রমাণ করেন। তাঁর
মতে পূর্বজন্ম একটি বিজ্ঞান সম্মত সত্য। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “ইভলিয়শান
এন্ড এথিক্স এন্ড আদার এসেস্”-এ লিখেছেন, “ব্রাহ্মণ্য ও বৌদ্ধধর্মের ইতিবৃত্তান্তে ব্যাখ্যা
যাই হোক না কেন, বিশ্ব প্রকৃতির কসইমক শক্তির সঙ্গে মনুষ্য জীবনের আন্তঃ
গমন-নির্গমন তথ্যে সত্য নিহিত আছে। গভীর বিশ্লেষনের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হয় না
বলে সত্যটি অনেকের কাছে স্পষ্ট নয়। জীবজগতের
বিবর্তন তত্ত্ব ও পুনর্জন্ম তত্ত্ব সমতুল্য”।
এ যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী
আইনস্টাইনের সহকর্মী সুইডিস
জ্যোর্তিবিজ্ঞানী ও পদার্থ বিজ্ঞানী অধ্যাপক গুনটেপ্ স্ট্রমবার্গ এর পূনর্জন্ম
সম্পর্কে মন্তব্য হলো- “মানুষের আত্মার পূনর্জন্ম হয় কিনা, সে সম্পর্কে বিভিন্ন
মতবাদ আছে। ১৯৩৬ সালে ভারত সরকার একটি
বিষ্ময়কর ঘটনার অনুসন্ধান করে রিপোর্ট
প্রদান করে। দিল্লীতে বসবাসকারী শান্তি দেবী নামের এক বালিকা দিল্লী থেকে ৫০০ মাইল
দূরবর্তী মথুরায় তাঁর পূর্বজন্মের স্মৃতি সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা দেয়। তাঁর স্বামীর,
সন্তানদের নাম, বাড়ীর ঠিকানা এবং প্রতবেশীদের নিয়ে নানা ঘটনার পুংখানুপুঙ্খ
বর্ণনার সত্যতা যথাযথ অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে। এই ধরনের আরও ঘটনা মানুষের
স্মৃতির অবিনাশ থাকার সত্যতা প্রমাণ করে। বৃটিশ বিজ্ঞানী, ইউনেস্কোর ডাইরেকটার
জেনারেল অধ্যপক জুলিয়ান হাসলের মন্তব্য হলো-পুনর্জন্ম বিজ্ঞান সম্মত। বেতার
মাধ্যমে সংবাদ প্রচারের সঙ্গে পুনর্জন্ম প্রক্রিয়ারমিল আছে। বেতারে সংবাদ প্রেরণ ও
গ্রাহক যন্ত্রে ধারণ প্রক্রিয়ার মতো পূনর্জন্ম
প্রক্রিয়ায় দেহ থেকে দেহান্তরে প্রবাহিত হবার ক্ষেত্রে আত্মসত্তার ভূমিকা
বিদ্যমান। মন ঐ ভূমিকার চালিকাশক্তি”।
আমেরিকার শিল্পপতি হেনরীফোর্ডের
মত একজন বাস্তববাদী ব্যক্তিত্বের পূনর্জন্ম সম্পর্কে বক্তব্যঃ
“আমি আমার ২৬ বছর বয়সে পুনর্জন্মে বিশ্বাসী হই। আমার নিজ ধর্ম বিশ্বাসে এ
ব্যাপারে কোন ভূমিকা ছিল না।পুপূর্ব জন্মে বিশ্বাসের ফলে আমার জীবনের অসমাপ্ত কাজ
সমাপ্ত করার সুযোগ পাবার স্বস্তিবোধ করি। এক জীবনের অক্লান্ত পরিশ্রমের ও
অভিজ্ঞতার অসমাপ্ত কাজ যদি এ জীবনে সম্পন্ন না হয় তাহলে আমার অনেক পরিশ্রম পন্ডশ্রমে
পর্যবশিত হবার আশঙ্কা ছিল। পুনর্জন্মে বিশ্বাসের ফলে মনে হয়, আমার কাজের সমৃদ্ধি ও
সংশোধনের সুযোগ পাব। আমি আর সময়ের দাস নই। অনেকে মনে করেন প্রতিভা একটি অনুদান।
প্রকৃতপক্ষে প্রতিভা হলো অভিজ্ঞতার ফসল। অভিজ্ঞতার ফসল প্রতিভা বিকাশের সুযোগ যদি
এ জীবনে সম্পন্ন করার সুযোগ পাবো এই বিশ্বাসে আমার কর্ম পরিকল্পনা বৈশ্বিক পর্যায়ে
বিস্তৃত করার তাগিদ অনুভব করি। আমি এই অভিজ্ঞতার কথা সবাইকে জানাতে চাই”।
উপরের পর্যলোচনায় স্পষ্ট ধারণা
জন্মে, পুনর্জন্ম একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা ও বিজ্ঞান ভিত্তিক বিষয়।
বস্তুতপক্ষে বিষয়টি যথার্থ উন্নীত জীবন স্তরে গিয়ে উপলদ্ধির বিষয়,
গবেষণাগারে পরীক্ষার বিষয় নয়। এ জীবনের ভুল সংশোধন করা যাবে না অসমাপ্ত কাজ করার
সুযোগ থাকবে না, এইরূপ চিন্তাধারা জীবনমূখী নয়।
পুনর্জন্ম আমাদের সেই সুযোগের আশ্বাস দেয়। বৌদ্ধ দর্শনের লক্ষ্য নির্বাণ লাভ এ
জীবনে না হলে পরবর্তী জীবনে সেই সাধনা অব্যাহত থাকবে। এ জীবনের ভুল,
অসম্পূর্ণতাগুলি পরবর্তী জীবনে সংশোধন ও সমাপ্ত করার, ভুল থেকে শিক্ষা লাভ করার, এ
জীবনে যা অর্জিত হয়নি তা পরবর্তী জীবনে অর্জনের সম্ভাবনার
কথা কি অপূর্ব আনন্দময়!
[দুগ্ধ যেমন সঙ্গে সঙ্গে দধি হয় না, সুকর্ম, কুকর্মও
তেমনি সঙ্গে সঙ্গে সুফল, কুফল দেয় না। ভস্ম দিয়ে আচ্ছাদিত শিখাহীন আগুনের মতো
অকুশলকারী কে যথাসময়ে কুফল দেয়। সুফল, কুফল প্রপ্তি শুধু সময়ের ব্যাপার।]
........................................................................................................
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন