কুশল প্রশ্নোত্তরঃ বৌদ্ধ দর্শনে ঈশ্বর - ভদন্ত.এস ধাশ্মিকা

প্রশ্নঃ- বৌদ্ধরা কি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন?
উত্তরঃ না, বৌদ্ধেরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন নাএর স্বপক্ষে কয়েকটি যুক্তি আছে আধুনিক সমাজ-বিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানীদের মতো বুদ্ধ বিশ্বাস করতেন, ঈশ্বরে বিশ্বাসের বিষয়টি মানুষের মনের ভয়-ভীতি থেকে সৃষ্টবুদ্ধ বলেছেন, ভয়ার্থ মানুষ তথাকথিত পবিত্র পাহাড়-পর্বতে, গুহায়, পবিত্র বৃক্ষের তলায় কিংবা দেব-দেবীর স্মৃতি মন্দিরে নিয়মিত যাতায়াত করে থাকেনআদিম অধিবাসী মানুষকে ভয়াবহ বিপদজনক প্রতিকূল পরিবেশে বসবাস করতে হতোচারপাশে হিংস্র জন্তু-জানোয়ারের ভয়, ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাব, শারিরীক আঘাত ও রোগের যন্ত্রণা, বিদ্যু চমকানো বজ্রাঘাত এবং আগ্নেয়গিরির ভয় সংকুল পরিবেশে মানুষ নিজেকেঅসহায় বোধ করতোকোথাও নিরাপত্তা খুজেঁ না পেয়ে ভয়ার্থ মানুষ নিরাপত্তার আশ্রয় হিসেবে ঈশ্বর কল্পনা করেনঈশ্বরের কাছে বিপদের সময় সাহস, দুঃসময়ে সান্তনা এবং সুসময়ে স্বস্তি লাভ করেনআপনি লক্ষ্য করবেন বিপদে পড়লে মানুষ বেশী ধার্মীক হয়ে উঠেনবিপদ সংকট উত্তরণের জন্য দেব-দেবী বা কোন অদৃশ্য শক্তির কাছে প্রার্থনা করা হয়, যাতে সেই শক্তি বিপদশুক্ত করেনএতে বিপদগ্রস্ত মানুষের মনে সাহসের সঞ্চার হয়যাঁরা যেই দেব-দেবীতে বিশ্বাসী, তাদেঁর প্রার্থনা অভিষ্ট সেই দেব-দেবী শোনেন এবং সাড়া দেন বলে বিশ্বাস করা হয়প্রকৃতপক্ষে, অজ্ঞতা জনিত ভয়ের কারণে ঐরূপ বিশ্বাস সৃষ্টি হয়ভয়ের কারণ বিজ্ঞান ভিত্তিক যুক্তির সাহায্যে বিশ্লেষণ করতে , হতাশার কারণ অনিয়ন্ত্রিত ভোগতৃঞ্চা প্রশমিত করতে এবং অপ্রতিরোধ্য বিষয়গুলোকে শান্ত, ধৈর্যশীল ও সাহসী হয়ে মোকাবিলা করার জন্য বুদ্ধের উপদেশ প্রণিধানযোগ্য
ঈশ্বরে বিশ্বাস না করার দ্বিতীয় কারণ হলো ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক প্রমাণের অভাবঈশ্বরে বিশ্বাসী ধর্মগ্রন্থ সমূহে ঈশ্বর বিশ্বাস সম্পর্কে নিজ নিজ ধর্মগ্রন্থে উদ্ধৃত বিষয়সমূহ সঠিক, অন্যদের  সঠিক নয় বলে দাবি করা হয়কেউ ঈশ্বরকে পুরুষ, কেউ ঈশ্বরকে নারী, আবার কেউ ক্লিব হিসেবে বিশ্বাস করেনপ্রত্যেকের নিজ নিজ বিশ্বাস সত্য, অন্যদের বিশ্বাস মিথ্যা বলে দাবি ও উপহাস করেনবিস্ময়ের ব্যাপার হলো এই যে, বিগত শত শত বছর ধরে ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে তর্ক বিতর্কের উর্ধে, সুনিশ্চিত ও বিজ্ঞানসম্মত কোনও সাক্ষ্য প্রমাণ অদ্যাবধি পাওয়া যায়নিসেই কারণে, সুনির্দিষ্ট প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত, বৌদ্ধরা বিষয়টি মুতবি রেখে দিতে চান
ঈশ্বরে বিশ্বাস না করার তৃতীয় কারণ হলো, শুদ্ধ সার্থক জীবন যাপনে ঈশ্বরে বিশ্বাসের প্রয়োজন নেইঅনেকে মনে করতে পারেন, বিশ্বব্রহ্মান্ড সৃষ্টির রহস্য উদ্ধারের জন্য ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাসের প্রয়োজনকিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান এই রুপ কোন বিশ্বাস ছাড়াই সৃষ্টি রহস্য উদ্ঘাটন করেছেআবার কেউ মনে করেন, সুখী ও কণ্ঠাহীন জীবনযাপনে ঈশ্বরে বিশ্বাস প্রয়োজনএ কথাও ঠিক বলে মনে হয় নাশুধুমাত্র বৌদ্ধরা নন্, পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ মানুষ আছেন, যাঁরা ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাসী নন্তাঁরা অন্যান্যদের মত কার্যকারণের নিয়মে কর্মফল ভোগ করে জীবনযাপন করে যাচ্ছেনআবার অনেকে মনে করেন, নিজের মধ্যে শক্তি সঞ্চারের জন্য ঈশ্বরে বিশ্বাস প্রয়োজনকিন্তু ঈশ্বরে বিশ্বাসী নন্, এমন অনেকে আছেন, যাঁরা আত্মবিশ্বাস ও নিজেদের কর্মোদ্যমে বাঁধা-বিপত্তি ও পঙ্গুত্বের অক্ষমতা অতিক্রম করে সফলতার চুড়াঁয় আরোহণ করেছেনআবার কেউ মনে করেন, ঈশ্বরে বিশ্বাস আত্মমুক্তির সহায়কবুদ্ধ নিজের সাধনলদ্ধ বাস্তব অভিজ্ঞতা দিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছেন যে, প্রতিটি মানুষ মনের কলুষ দূর করে, মৈত্রী করুণার আদেশে জীবনযাপনে প্রজ্ঞা অর্জন করতে পারেন এবং আপন প্রজ্ঞা শক্তিতে অভিষ্ট লক্ষ্য অজর্ন করতে সক্ষমবুদ্ধ মানুষের দৃষ্টিকে অলৌকিক ঈশ্বর কেন্দ্রিকতা থেকে মানবকেন্দ্রিকতায় ফিরিয়ে এসেছেন এবং আত্মশক্তি দিয়ে নিজ সমস্যা সমাধানে মানুষকে উজ্জিবীত করেছেনপ্রকৃতপক্ষে অলৌকিক কল্পনাশ্রিত শক্তি অপেক্ষা অভিজ্ঞচালক আত্মশক্তি অনেক বেশী শক্তিশালীপ্রাকৃতিক কার্যকারণে, নিজ নিজ শৃদ্ধ অশুদ্ধ জীবনাচরণগত কর্মই প্রত্যক মানুষের শুভ অশুভ কর্মফল প্রদান করেদ্বিতীয় অদৃশ্য কোন শক্তির এখানে ভূমিকা নেই
['অর্থব, উদ্যমহীন অশ্বকে পেছনে ফেলে সক্রিয় উদ্যোগী বেগবান অশ্ব যেমন এগিয়ে চলে, জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাবানরা তেমনি নিষ্ক্রয়দের মধ্যে সক্রিয়, সুপ্তদের মধ্যে জাগ্রত এবং ক্রোধীদের মধ্যে অক্রোধী হয়ে প্রগতির দিকে এগিয়ে চলে'] 
প্রশ্নঃ- যদি সৃষ্টিকর্তা না থাকে তাহলে বিশ্বমন্ডল হলো কি করে?
উত্তরঃ ঈশ্বরে বিশ্বাসী সব ধর্মই কাল্পনিক ও পৌরনিক কাহিনীর সাহায়্যে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে চেষ্টা করছেএকবিংশ শতাব্দীতে পদার্থ বিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান, ভূবিজ্ঞানের তথ্যের কাছে পৌরনিক কল্পকাহিনী এখন গুরুথ্ব হারিয়ে ফেলেছেবর্তমানে ঈশ্বরে বিশ্বাস ছাড়াই সৃষ্টি রহস্য উদ্ঘাটন করে ফেলেছে, যা বৈজ্ঞানিক তথ্যে প্রমাণিত হয়েছে 
প্রশ্নঃ-বিশ্ব মন্ডলের সৃষ্টি সম্পর্কে বুদ্ধ কি বলেছেন?
উত্তরঃ  এ সম্পর্কে আধুনিক বিজ্ঞান এবং বুদ্ধের ব্যাখ্যা অভিন্ন। "অগ্গঞা সূত্রে" বুদ্ধের ব্যাখ্যা হলো, লক্ষ লক্ষ বছরের দীর্ঘ সময় ব্যাপী প্রাকৃতিক বিবর্তনের ধারায় সৌরমন্ডল ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে পুনরায় সৌরমন্ডলের বর্তমান ঘূর্ণায়মান অবস্থা সৃষ্টি হয়েছেবিশ্বপ্রকৃতির প্রথম প্রাণীর সৃষ্টি হয় জলে, এককোষী প্রাণী হিসেবেপরবর্তী পর্যায়ে বিবর্তনের মাধ্যমে এককোষী প্রাণী বহুকোষী যৌগিক প্রাণীতে রুপান্তরীত হয় প্রাকৃতিক কার্য-কারণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই রুপান্তর ঘটেছে, যা বুদ্ধের "প্রতীত্য সমুপাদ সূত্রে"ও দেশিত হয়েছে
প্রশ্নঃ-আপনি বলছেন, সৃষ্টির রহস্য ঈশ্বরে বিশ্বাস ছাড়া প্রমাণিত হয়েছেতাহলে অলৌকিক ঘটনাগুলো কিভাবে ব্যাখ্যা করা যায়?
উত্তরঃ অনেকে বিশ্বাস করেন, অলৌকিক ঘটনাগুলো ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণ কিন্তু অলৌকিক উপায়ে কোন রোগ নিরাময় হতে পারে চিকিসা বিজ্ঞানে  সমর্থন পাওয়া যায় নাজনশ্রুতিতে শোনা যায়, কেউ বিপর্যয় থেকে অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছেনকিন্তু কি প্রক্রিয়ায় তা ঘটেছে, তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ নেই রোগাক্রান্ত বেঁকে যাওয়া শরীর সোজা হয়ে গেছে, পক্ষাঘাতে অবশ প্রত্যঙ্গ শক্তি ফিরে পেয়েছে ইত্যাদি ঘটনা অলৌকিকভাবে ঘটেছে বলে দাবী করা হলেও চিকিসা বিজ্ঞানের পরীক্ষায়  তার সত্যতা প্রমাণ করে নাজনশ্রুতি, অসমর্থিত দাবী কখনো প্রমাণিত সত্যের বিকল্প হতে পারেনাব্যখ্যা করা যায় না কিংবা প্রত্যক্ষ প্রমাণ মিলে না এমন ঘটনা কখনো কখনো ঘটে থাকেএর ব্যখ্যা করার ক্ষমতা আমাদের জ্ঞানের অসম্পূর্ণতা প্রমাণ করে, কিন্তু তাতে ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয় নাআধূনিক চিকিসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির আগে রোগে আক্রান্ত হওয়াকে কোন দেবদেবী বা ঈশ্বরের শাস্তি বলে বিশ্বাস করা হতোএখন রোগের কারণ জানা গেছে, রোগাক্রান্ত হলে চিকিসা করে রোগ নিরাময় হয় ভবিষ্যতে আমাদের জ্ঞান পরিধি আরও বিস্তৃত হলে আজকের অজানা অনেক রহস্য উম্মোচিত হবে, যেমন এখন আমরা অনেক রোগের কারণ বুঝতে সক্ষম হয়েছি
প্রশ্নঃ- অনেকে ঈশ্বরের অস্তিত্ব কোনো না কোনোভাবে বিশ্বাস করেনএখানে সত্য নিহিত আছে, এই কথা কি বলা যায় না?
উত্তরঃ না, তা বলা যায় নাএক সময় ভূ-মন্ডলকে চ্যাপ্ট বলে মনে করা হতো কিন্তু পরে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছেবিপৃল সংখ্যক মানুষ কিছু বিশ্বাস করে বলে, তা সত্য - এ কথা বলা যায় নাসত্য মিথ্যা নিরুপন করা উচিত তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে
প্রশ্নঃ- বৌদ্ধেরা ঈশ্বরে বিশ্বাস না করলে কিসে বিশ্বাস করেন?
উত্তরঃ আমরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করি নাআমরা মানুষের অপরিমেয় শক্তিতে বিশ্বাস করিআমরা বিশ্বাস করি, প্রত্যেক মানুষ মূল্যবান এবং প্রতিটি মানুষের মধ্যে অনন্ত মেধা সুপ্ত আছেকর্মসাধনায় প্রতিটি মানুষ বুদ্ধের মত প্রজ্ঞা লাভ করে কোন বিষয় আসলে যে রকম  ঠিক সেই রকম প্রত্যক্ষ করতে সক্ষম হতে পারেনআমরা বিশ্বাস করি, মনের ঈর্ষা, ক্রোধ ও ঘৃণার স্থলে করুণা, ক্ষমা ও মৈত্রীর অনূভূতিতে উজ্জিবীত হয়ে প্রতিটি মানুষ নিজ জ্ঞানশক্তির সাহায্যে জীবন জগতের সকল সমস্যা সমাধান করতে সক্ষমবুদ্ধ বলেছেন আমাদের অন্য কেউ রক্ষা করতে পারে না, নিজেই নিজেকে রক্ষা করতে হয়
অজ্ঞতা ধূর করে জ্ঞানের আলোকে জীবনের স্বরুপ জ্ঞাত হয়ে আপন কর্মশক্তির সাহায্যে নিজ নিজ সমস্যা সমাধান করতে হয়বাস্তব অভিজ্ঞতার জ্ঞানাআলোকে বুদ্ধ স্পষ্ট ভাবে সেই পথ চলার সন্ধান দিয়েছেন
প্রশ্নঃ- অন্য ধর্মের অনুসারীরা তাদেঁর দেবদেবীর নির্দেশিত উপায়ে কোনটি সত্য কোনটি মিথ্যা তা নির্ধারণ করেনআপনি তো ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না, কি করে নির্ধারণ করেন- কোনটি সত্য কোনটি মিথ্যা?
উত্তরঃ যে চিন্তা-ভাবনা-বাক্য কিংবা কর্ম ঈর্ষা, লোভ, ঘৃণা ও মোহের শেখরে আবদ্ধ, তা মন্দ ও অমঙ্গলদায়ক এবং নির্বাণের পথ থেকে দূরে সরিয়ে রাখেযে চিন্তা-ভাবনা-বাক্য বা কর্ম; ত্যাগ, ক্ষমা, মৈত্রী, করুণা ও প্রজ্ঞার শেখরে নিবদ্ধ, তা সত্য, মঙ্গল ও উত্তম এবং নির্বাণের পথে নিয়ে যায়ঈশ্বর নির্ভর ধর্ম দর্শনে আপনাকে যা করতে নির্দেশ দেয়া হয়, তাই করতে হয় কিন্তু মানবকেন্দ্রিক ও যুক্তি নির্ভর বৌদ্ধ দর্শনে নিজের আত্মশক্তির বিচার বিশ্লেষণে, আত্মোপলদ্ধির সাহায্যে কোনটি সত্য কোনটি মিথ্যা, কোনটি ভাল, কোনটি মন্দ কোনটি মঙ্গলজনক, কোনটি অমঙ্গলজনক তা নির্ধারণ করতে পারেন
জ্ঞান ভিত্তিক নৈতিকতা, আদেশ-নির্দেশ নির্ভর নৈতিকতার চাইতে অবশ্যই অধিকতর শক্তিশালীকেননা প্রথমটি বিচার বিশ্লেষণের উপর, দ্বিতীয়টি বিশ্বাসের উপর নির্ভরশীল
অনুরুপভাবে, কোনটি সত্যাশ্রয়ী, কোনটি মিথ্যাশ্রয়ী, কোনটি নিজের এবং অন্যের জন্য মঙ্গলজনক তা নিরুপনের জন্য বুদ্ধ তিনটি বিশ্লেষণ প্রক্রিয়া অনুসরণ করার জন্য উপদেশ দিয়েছেনঃ 
১) যদি উদ্দেশ্য সত্যাশ্রয়ী হয় অর্থা যে কর্ম ভালোবাসা ও প্রজ্ঞা উদ্ভূত,
২) যে কর্মফল নিজের সহায়ক হয় অর্থা কর্ম যদি নিজেকে অধিকতর ত্যাগী, মৈত্রীপূর্ণ ও প্রজ্ঞাবান করতে সক্ষম হয়,
৩) যে কর্ম অন্যের জন্য উপকারী অর্থা যে কর্ম অন্যকে অধিকতর ত্যাগী, মৈত্রীভাবাপন্ন ও প্রজ্ঞাবান করতে সাহায্য করে, সেই কর্ম সম্পাদনই সত্যাশ্রয়ী, উত্তম, নৈতিক এবং সর্বাঙ্গীন মঙ্গলময়তবে কার্যকারণ প্রক্রিয়ার সুক্ষ্ম বিচারে আপাতদৃষ্টিতে ব্যতিক্রম থাকতে পারেযেমনঃ স উদ্দেশ্যে কোন কর্ম বাহ্যিক দৃষ্টিতে তা আমার ও অন্যের মঙ্গলদায়ক মনে না হতে পারেআবার কখনো কখনো আমার স উদ্দেশ্যে কৃত কর্ম আমার জন্য মঙ্গলদায়ক হলো, কিন্ত অন্যের জন্য কষ্টদায়ক মনে হতে পারেতবে মিথ্যশ্রয়ী কর্ম সম্পদনের ফল, আমার এবং অন্যের জন্য অবশ্যই কষ্টদায়ক হবেকুশলধর্মী কর্মের ফল আমার এবং অন্যের জন্য সর্বাঙ্গীন মঙ্গলদায়ক হবে উদ্দেশ্য নিয়ে কর্মের ফলপ্রাপ্তি শুধু সময়ের ব্যাপারবুদ্ধ বিচার বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় সত্যাশ্রয়ী ও মিথ্যাশ্রয়ী কর্ম সম্পাদনের এবং কর্মফল প্রাপ্তির ব্যাখ্যা করেছেনপ্রকৃতির নিয়ম রাজ্যে কার্যকারণ প্রক্রিয়ার এমন বিধান কার্যকরী, যার প্রভাবেই যথাযথ কর্মের যথাযথ ফলের সৃষ্টি হয়এটিই বুদ্ধের দীর্ঘ ৬বছর কঠোর সাধনালদ্ধ এবং অভিজ্ঞতালদ্ধ সত্যোঘাটন
                                      ...............................................

কুশল প্রশ্নোত্তর (পর্ব ২) - ভদন্ত এস. ধাম্মিকা

অনূবাদকঃ- অধ্যাপক ডাঃ  অরবিন্দ বড়ুয়া  
বৌদ্ধ দর্শনের নির্যাস


প্রশ্নঃ- বৌদ্ধ দর্শনের মূল বক্তব্য কি?
উত্তরঃ বৌদ্ধদর্শনের মূল বক্তব্য "চতুরার্য সত্যে" বিধৃত। একটি চাকার চারপাশের বেড থেকে যেমন তার বাহুগুলি চাকার কেন্দ্রে কেন্দ্রীভূত হয়, তেমনি বৌদ্ধদর্শনের সকল বিষয়ের মূল বক্তব্য "চতুরার্য সত্যে" কেন্দ্রীভূত। শব্দটির "চতু" আর্যসত্যের চার; "আর্য" পরিশীলিত জ্ঞান, আর  সত্য হলো জীবনমূখী বাস্তবতা। যিনি "চতুরার্যসত্য" হ্রদয়ঙ্গম করেছেন, তিনি জীবন জগতের স্বরুপ প্রণিধান করে জ্ঞানের মহিমায় মহিমান্বিত হয়েছেন।
প্রশ্নঃ- চতুরার্য সত্যের প্রথম সত্য কি?
উত্তরঃ- প্রথম আর্য সত্য হলো সারা জীবন দুঃখ ভোগ করে যেতে হয়। অর্থাৎ বেঁচে থাকতে হলে দৃঃখ ভোগ না করে উপায় নেই; কোন না কোন রকম দুঃখ ছাড়া বেঁছে থাকা সম্ভব নয়। আমাদের সবাইকে অসুস্থতা, শারিরীক আঘাত, ক্লান্তি, বার্ধক্য-যন্ত্রণা, একাকীত্ব, হতাশা, ভীতি, অস্বস্থি, অসন্তোষ, ক্রোধের মত মানসিক ক্লেশ এবং অবশেষে মৃত্যুযন্ত্রণার দুঃখ ভোগ করে যেতে হয়। জীবনজগতে প্রিয়বিয়োগ, অপ্রিয় সংযোগ দুঃখ এড়ানো সম্ভব নয়। 
প্রশ্নঃ- বৌদ্ধদর্শনের মূল বক্তব্য কি হতাশাবাদী নয়?
উত্তরঃ- হতাশাবাদের আভিধানিক অর্থ হলো- যাই ঘটে, সবই মন্দ, ভাল কিছুই ঘটে না, মন্দ ব্যক্তি ভাল ব্যক্তি অপেক্ষা শক্তিশালী ইত্যাদি। এর কোনটিতে বৌদ্ধদর্শন বিশ্বাসী নয়। তাছাড়া সুখশান্তি নেই, এই কথায়ও বৌদ্ধদর্শন বিশ্বাসী নয়। বৌদ্ধদর্শনের বক্তব্য হলো, বেঁচে থাকতে হলে জীবনে অপরিহার্য দুঃখ যন্ত্রণা ভোগ করে যেতে হবে যা কারও অস্বীকার করার উপায় নেই। অলৌকিক পৌরনিক কল্পকাহিনীর উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধর্মের যে মূলবক্তব্য, তা বাস্তব অভিজ্ঞতার যুক্তি দিয়ে মেনে নেয়া দুষ্কর। বৌদ্ধদর্শনের মূলবক্তব্য বাস্তব অভিজ্ঞতা লদ্ধ। বাস্তব সত্য এই যে, আমরা সবাই জাগতিক দুঃখ যন্ত্রণা ভোগকরি যা হগতে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য আমরা অহরহ সংগ্রাম করে যাচ্ছি। বৌদ্ধদর্শনের মানুষের সেই সার্বজনীন চিরন্তন ও দুঃখমুক্তির কথা বলা হয়েছে। এই কারণেই বৌদ্ধধর্মকে সার্বজনীন ও বিশ্ব ধর্ম হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। নিজের মধ্যে সুপ্ত আত্মশক্তিকে জাগ্রত করে জ্ঞানের আলোকে দুঃখ মুক্ত হয়ে নিজেকে সার্বজনীন মঙ্গল কাজে লিপ্ত হতে বৌদ্ধদর্শন শিক্ষা দেয়। বৌদ্ধিক জীবনাদর্শনে হতাশা নেই।
প্রশ্নঃ-দ্বিতীয় আর্যসত্য কি?
উত্তরঃ- দ্বিতীয় আর্যসত্য হলো - "অনিয়মতান্ত্রিক লাগামহীন চাহীদা দুখের সৃষ্টি করে। আমাদের মানসিক যন্ত্রণার বিষয়টি বিশ্লেষণ করলে বুঝতে অসুবিধা হয় না ,  কিভাবে দুঃখের সৃষ্টি হয়। যখন আমরা কিছু পেতে চাই , পাইনা, তখন হতাশাগ্রস্ত হই। কোন প্রিয়ব্যক্তিকে আমাদের আশানুরুপ বয়স পর্যন্ত বাচিয়েঁ রাখতে চাই, কিন্তু পারি না, তখন আবার উৎকণ্ঠায় ভেঙ্গে পড়ি। আমরা চাই , অন্যেরা আমাদের স্ম্ন করুক, পছন্দ করুক, যখন তা হয় না তখন  হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। তাছাড়া যা চাই তা পেলেও সম্পূর্ণ সুখী হওয়া যায়না। কারণ কিছুদিন পর প্রাপ্ত বস্তুর প্রতি আগ্রহ হ্রাস পায়। এরপর অন্য কিছু পেতে ইচ্ছে জাগে।দ্বিতী সত্যের আলোকে বিষয়টি বিশ্লেষণ করলে বুঝা যাবে, নিয়ন্ত্রণহীন, লাগামহীন চাহিদা আমাদের প্রকৃত সুখশান্তি দিতে পারে না। অবিরাম আরও চাই , এর চাহিদা মেটে না। প্রয়োজন মেটানোর সন্তুষ্টি সীমাবদ্ধ রাখার মধ্যেই প্রকৃত শন্তি নিহিত।
প্রশ্নঃ-অনিয়ন্ত্রিত চাহিদা ও অভাববোধ কি ভাবে শারিরীক যন্ত্রণার কারণ হতে পারে?
উত্তরঃ- সারাজীবন ব্যাপী এটি, সেটি না পাওয়ায় অনিয়ন্ত্রিত তৃঞ্চাবোধ, বৈষয়িক সুখ বিলাস  নিয়ে অব্যাহত বেঁচে থাকার কামনার ফলে ব্যক্তি সত্ত্বার মধ্যে এমন ভব উপাদান শক্তি উদ্ভূত হয়, যার প্রভাবে পুনর্জন্ম হয়। এভাবে পুনর্বার দেহধারণের ফলে পুনরায় অপরিহার্য শারিরীক আঘাত, ক্লান্তি, রোগযন্ত্রণা এবং মৃত্যুর শিকারে পরিণত হবার ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়।
প্রশ্নঃ- সকল প্রকারের চাওয়া পাওয়ার ইচ্ছা বন্ধ করে দিলে তো আমরা কিছুই অর্জন করতে পারব না, তাই নয় কি?
উত্তরঃ এর উত্তরে বুদ্ধ বলেছেন, তার সারমর্ম হলো, যেহেতু আমাদের অনিয়ন্ত্রিত চাহিদা না পাওয়ার অসন্তোষ আমাদের কষ্ট দেয় সেহেতু একে রোধ করা উচিত। তিনি আমাদের চাহিদা এবং প্রয়োজনের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণ করে চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করতে উপদেশ দিয়েছেন। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, আমাদের প্রয়োজন মেটানো সম্ভব; কিন্তু চাহিদা পূরণ করা অসম্ভব। কারণ চাহিদা তলা বিহীন পাত্রের মতো কখনো পূর্ণ হবার নয়।আমাদের সংসারে কিছু কিছু মৌলিক অপরিহার্য প্রয়োজন আছে; তার জন্য অবশ্যই চেষ্টা করতে হবে।কিন্তু এর বাইরে যেটি কখনো তৃপ্ত না হবার চাহিদা, তার নিয়ন্ত্রণ অবশ্য করনীয়। প্রকৃতপক্ষে জীবনের উদ্দেশ্য শুধু চাহিদা মেটানোর জন্যে অবিরাম ছুটতে থাকা নয়। জীবনের উদ্দেশ্য প্রকৃত সুখ শান্তি প্রাপ্তির অনুশীলন করা। মৌলিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি মানুষের কল্যাণধর্মী শিল্প,সাহিত্য বিজ্ঞান চর্চার কেন্দ্র নির্মাণ করা।
প্রশ্নঃ- আপনি এর আগে পুনর্জন্মের কথা উল্লেখ করেছেন, পুনর্জন্মের কোনও প্রমাণ আছে কি?
উত্তরঃ পুনর্জন্ম হয়, এ সম্পর্কে প্রচুর প্রমাণ আছে। আমরা পরবর্তী পর্যায়ে এ বিষয়ে আলোচনা করবো।
প্রশ্নঃ তৃতীয় আর্যসত্য কি?
উত্তরঃ তৃতীয় আর্যসত্য হলো, "দুঃখ থেকে মুক্তি পেয়ে প্রকৃত সুখশান্তি লাভ করা যায়"। চতুরার্য সত্যে এটিই সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এখানে বুদ্ধ আমাদের সুখশান্তি পাওয়ার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন। আমরা যখন অর্থহীন লাগামহীন চাহিদা বর্জন করি, সংসারের অপরিহার্য বাস্তবতাকে ধৈর্য ও অধ্যাবসায়ে ও ক্রোধহীন হয়ে সমাধান করে অন্যের প্রতি ঘৃণাবোধ রোধ করি, বর্তমানের প্রতিদিনটিতে অভিজ্ঞতা লদ্ধ আনন্দে বাঁচার সন্তুষ্টি নিয়ে বাঁচতে শিখি, এইভাবে মৃত অতীতের জন্য অনুশোচনা না করে, বরং অতীতের কৃত ভূল থেকে শিক্ষা লাভ করে, অনাগত ভবিষ্যত সম্পর্কে দুঃচিন্তা না করে, সম্পূর্ণভাবে বর্তমানের প্রতি মুহুর্তের মধ্যে বাঁচার অনুশীলন করে বর্তমাণকে কুশল করে, ভবিষ্যতকে মনোরম করে গড়া যায়। আমরা এভাবে দুঃখকে অতিক্রম করে প্রকৃত সুখশান্তি লাভ করতে পারি।এই অবস্থায় আমরা নিজের গন্ডিবদ্ধ সংকীর্ণ স্বার্থচিন্তা মুক্ত হয়ে অন্যকে সাহায্য করার সহমর্মিতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে পারি। এ অবস্থার ক্রম-অগ্রগতির ফলে মানসিক সকল প্রকার যন্ত্রণার উপশম হয় এবং নির্বাণের পথ সুগম হয়।
প্রশ্নঃ- নির্বাণ কি? এর অবস্থান কোথায়?
উত্তরঃ নির্বাণ স্থান-কাল-মাত্রা উত্তীর্ণ এক অবস্থা। স্থান-কাল-মাত্রা সীমিত কোন বিষয় বর্ণণা করা যেতে পারে, কিন্তু স্থান- কাল-মাত্রা উত্তীর্ণ বিষয়ের বর্ণণা করা সম্ভব নয়। এর ব্যখ্যা , নির্বাণে উত্তীর্ণ নয়, এমন কারও পক্ষে বর্ণনা ও উপলদ্ধি করা সম্ভব নয়। নির্বাণ অনন্ত যার কোন পরিসীমা নেই, আত্ম-অনাত্ম নেই। বুদ্ধ বলেছেন, নির্বাণ নিজ অভিজ্ঞতালদ্ধ অনুভূতির বিষয়, বর্ণনায় এর যথার্থতা বুঝানো সম্ভব নয়। গুড়, চিনি, মধূ কোনটির মিষ্টি কিরুপ, তা যেমন স্বাদ গ্রহণ করে অনুভব করতে হয়, নির্বাণ বিষয়টিও অনুরুপ। বুদ্ধ বলেছেন, নির্বাণ হলো এক অপরিমেয় সুখানুভূতি।এখানে জন্ম-মৃত্যু ও দুঃখের যন্ত্রণা নেই, তথা প্রচলিত সুখের বিহ্বলতাও নেই। এটি সুখ-দুঃখ উত্তীর্ণ, নির্বাণ প্রশান্ত অবস্থা।
প্রশ্নঃ- নির্বান এক মাত্রা উত্তীর্ণ অবস্থা, তার কি কোন প্রমাণ আছে?
উত্তরঃ  না তার কোন প্রমাণ নেই বটে; কিন্তু এ সম্পর্কে মন্তব্য করা যায়। আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতায় মাত্রাসীমিত সময় ও স্থানের অস্তিত্ব থাকাতে আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, মাত্রা উত্তীর্ণ সময় ও স্থানের অস্থিত্ব আছে। এই অবস্থাকে নির্বাণ আখ্যায়িত করা হয়। নিজ অভিজ্ঞতায় নিজের জিহ্বার সাহায্যে আস্বাদিত মিষ্টির স্বাদ যেমন বর্ণনা করা সম্ভব নয়, নির্বাণের সুখ অনুভূতি ও অস্তিত্ব সম্পর্কে তেমনি সরাসরি প্রমাণ উপস্থাপন করা সম্ভব না হলেও নির্বাণের অস্তিত্ব সম্পর্কে বুদ্ধের নিজ অভিজ্ঞতার কথা আছেঃ
 "যেখানে না-সৃষ্টি, না-জন্ম, না-বৃদ্ধিপ্রাপ্ত এবং না-যুক্ত হওয়া প্রক্রিয়া অনুপস্থিত, সেখানে সৃষ্টি হওয়া, জন্ম হওয়া, বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হওয়া, যুক্ত হওয়া সম্ভব নয়। পক্ষান্তরে যেখানে সৃষ্টি, জন্ম, বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ও যুক্ত হবার প্রক্রিয়ার অস্তিত্ব বিদ্যমান, সেখানে সৃষ্টি, জন্ম, বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ও যুক্ত হবার প্রক্রিয়ার অস্তিত্ব বিদ্যমান বলে সিদ্ধান্ত নেয়া বিজ্ঞান সম্মত"। নির্বাণের অস্তিত্ব সম্পর্কে উপরোক্ত ব্যাখ্যায় দেখি, প্রকৃতপক্ষে নির্বাণ স্তরে উন্নিত হলেই নির্বাণ সম্বন্ধে জানা সম্ভব হয়। তার আগে আমাদের ঐ অনাবিল, অপ্রমেয় শান্তি স্তরে নিজেদের উন্নিত করার অনুশীলনে মগ্ন হওয়া কর্তব্য।
প্রশ্নঃ- চতুরার্য সত্যের চতুর্থ আর্যসত্য কি?
উত্তরঃ চতুর্থ সত্যে দুঃখ দুর করার উপায় উল্লেখ আছে। এই উপায়কে আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ বলা হয়। এই আট অঙ্গ হলোঃ
১) সম্যকভাবে বুঝা বা হৃদয়াঙ্গম করা।সম্যকদৃষ্টিতে যা যেমন তাকে তেমনভাবে প্রত্যক্ষ করা।
২) সম্যক কর্ম হল, সঠিক ভাবে কর্ম সম্পাদন করার সঙ্কল্প গ্রহণ করা।
৩) সম্যক বাক্য হল যা নিজের ও অন্যর জন্য ক্ষতিকর নয়, এমন বাক্যালাপ।
৪) নিজের এবং অন্যের জন্য কুশলধর্মী কর্ম সম্পাদন করা।
৫) সম্যকভাবে জীবীকা অর্জন কর (মাদক দব্য, বিষ, মাছ-মাংস, মারণাস্ত্র, দেহব্যাবসা ইত্যাদি অসম্যক জীবীকা)।
৬) সম্যক চেষ্টা করা।
৭) সম্যক স্মৃতিহল, যখন যা করা হয় তখন তাতে সচেতন মনোযোগ রাখা।
৮) সম্যক সমাধি হল, জীবনাচরণে মনের একাগ্রতা।
বৌদ্ধ জীবনাচরণে এই আটটি জীবনাচরণ সম্পূর্ণতা লাভ না করা পর্যন্ত সাধনা ও প্রয়াস অব্যহত রাখা। বিশ্লেষণও বিচার করলে লক্ষ্য করা যায়, আর্যঅষ্টাঙ্গীক মার্গের ৮টি জীবনাচরণের মধ্যে জীবনের প্রয়োজনীয় প্রত্যকবিষয়, বুদ্ধিবৃত্তি, মেধা,নৈতিকতা, সমাজত্ত্ব, অর্থনীতি, মনস্ত্ব- এক কথায় একজন মানুষের পার্থিব জীবন থেকে আধ্যাত্ম জীবনে উন্নয়নের সকল বিধি বিধৃত আছে।
                                                                     ........................