চিত্তের একাগ্রতা
আনার এবং জ্ঞান লাভের একমাত্র উপায় হচ্ছে ভাবনা, ভাবনা ছাড়া চিত্তের একাগ্রতা আসে
না এবং একাগ্রতা ছাড়া বিদর্শন লাভ হয় না। লৌকিক ও লৌকত্তর হিসেবে ভাবনাকে দুই ভাগে
ভাগ করা হয়েছে। যথাঃ
১। শমথ ভাবনা(লৌকিয়
সাধনা)
২। বিদর্শন ভাবনা
(লোকত্তর সাধনা)
শমথ ভাবনার দ্বারা
ক্লেশ উপশম হয় ও চিত্তের একাগ্রতা আসে এবং বিদর্শন ভাবনার দ্বারা অজ্ঞান ধ্বংস হয়
এবং ক্লেশ নিবৃতি ঘটে। ভাবনা করতে হলে ভাবনাকারীর প্রাথমিক কয়েকটি বিষয় বিশেষভাবে
প্রয়োজনঃ-
ভাবনাকারীকে নিজের
চরিত্র অনুযায়ী উপযুক্ত গুরুর কাছ থেকে ভাবনার বিষয় ভালভাবে জেনে নিতে হবে। বিষয়
নির্বাচিত হয়ে গেলে সে বিষয়ের উপর শিক্ষা, অভ্যাস, আচরণ ধারণ ও পুরণ করার জন্য
দৃঢ়তার সাথে চেষ্টা করতে হবে। ভাবনার সময় অন্য সকল চিন্তা মন থেকে দূরীভূত করে সে
বিষয়ের উপর মনকে ডুবে রাখার জন্য বারংবার চেষ্টা করতে হবে। যে বিষয়ের উপর ভাবনা
করা হয় সেই বিষয় বাদে যদি অন্য বিষয় নিয়ে মন ডুবে থাকে তাহলে বুঝতে হবে প্রকৃত
ভাবনা হচ্ছে না। নিম্নে শ্রদ্ধেয় বনভান্তের ভাবনা বিষয়ক দেশনা এবং ধর্ম্মীয় শাস্ত্রের
বিভিন্ন উপদেশ হতে শমথ ভাবনা ও বিদর্শন ভাবনার কয়েকটি বিষয় সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা
হলো।
শমথ ভাবনাঃ
১। কামাসক্তি
পরিত্যাগের জন্য ৩২ প্রকার অশুচি ভাবনা করা। এ ভাবনার দ্বারা নাম-রূপের(কায়ের)
প্রতি লোভ উপশম হয়।
২। ক্রোধ হিংসা
পরত্যাগের জন্য চারি ব্রহ্মবিহার ভাবনা করা।
ক) মৈত্রী
ভাবনা-বিশ্বের সকল প্রাণীর সুখ কামনা করা।
খ) করুণা ভাবনা-
বিশ্বের সকল প্রাণীর প্রতি দয়া প্রদর্শন করা।
গ) মুদিতা ভাবনা-
অপরের সুখ, সৌভাগ্য দর্শনে সুখ অনুভব করা তথা মঙ্গল কামনা করা।
ঘ) উপেক্ষা ভাবনা- শত্রুর
প্রতি হিংসা না করার ভাবনা।
৩। চিত্তের বিতর্ক
পরিত্যাগের জন্য আনাপান স্মৃতি বা শ্বাস-প্রশ্বাস ভাবনা করা। বিতর্ক তিন প্রকারঃ
ক) কাম বিতর্ক-পুরূষ
যদি নারীর অথবা নারী যদি পুরুষের রূপ লাবণ্যে ও স্পর্শে সুখকামনা উদ্রেক করে তা
চিত্তের কাম প্রবৃত্তি।
খ) হিংসা বিতর্ক-
শত্রুকে মারার, হত্যা করার প্রবৃ্ত্তি।
গ) রাগ বিতর্ক- তাকে
কষ্ট দিব, দুঃখ দিব ইত্যাদি চিন্তা।
৪। আমিত্ব বা
অহংকারাদি পরিত্যাগের জন্য পঞ্চস্কন্ধের (রূপ, বেদনা, সংজ্ঞা, সংষ্কার,
বিজ্ঞানস্কন্ধ) অনিত্য ভাবনা করা। অহরহ ক্ষয় হচ্ছে বলে অনিত্য।