প্রজ্ঞাদর্পন ডেক্স
পৃথিবীতে চারটি ধ্রুব সত্য আছে। তম্মধ্যে প্রথম সত্য হল দু:খ সত্য। অর্থাৎ জীবনে কোন সুখ নেই জন্মগ্রহণ করলেই দু:খ। এই কথা শুনে অনেকে বৌদ্ধধর্মকে অথবা বুদ্ধকে দু:খবাদী বলে অভিহিত করে থাকেন। কিন্ত তিনি শুধু দু:খ বলে থমকে দাঁড়াননি, তিনি দু:খ থেকে কিভাবে মুক্তি পেতে হয় তার উপায়ও বলে দিয়েছেন।
আমার একজন কলীগের সাথে প্রায়ই জগৎ সৃষ্টিসহ ধর্মীয় নানা জটিল বিষয়ে আলোচনা হয়ে থাকে। আলোচনা প্রসংঙ্গে একদিন তাকে জিজ্ঞেস করি পৃথিবীতে বেচেঁ থাকাটা সুখ না দু:খ। তিনি আত্মবিশ্বাসের সহিত বললেন বেচেঁ থাকাটা সুখের। আমি তাকে শ্রদ্ধেয় বনভান্তের দেশনা থেকে একটি উদ্ধৃতি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই। কারণ ভোগবিলাসের জগতে বসবাসকারী বন্ধুটি মহান দু:খসত্য আর অনুধাবন করতে পারেন না। সেরূপ আমাদের সমাজে অনেকের কাছেই দৃ:খসত্য উপলদ্ধি হয় না, বিজ্ঞানের উৎকর্ষতায় ভোগবিলাসে মত্ত থাকায় কিংবা চেষ্টার অভাবে, নয়তোবা কর্মবিপাকানুযায়ী কল্যাণমিত্রের দর্শন বা সান্নিধ্যের অভাবে।
পৃথিবীতে জন্ম থেকে মৃত্য পর্যন্ত কোন সুখ নেই এমনকি বৌদ্ধদর্শন অনুযায়ী চরম লক্ষ্য নির্বাণ লাভ ব্যতীত মৃত্য পরবর্তী জীবনেও দু:খ পিছু ছাড়ে না।
মায়ের গর্ভে ভ্রুণ হয়ে জন্ম গ্রহণের পর থেকেই জীবের শ্বাস প্রশ্বাস কার্য শুরু হয়। শ্বাস একবার টেনে যদি আর প্রশ্বাস না ফেলা হয় এবং প্রশ্বাস একবার ফেলে যদি আর শ্বাস না টানা হয় তাহলে দুনিয়া অন্ধকার হয়ে যায় এবং দু:খ সত্য সহজেই অনুভব হয়। আরও বিভিন্নভাবে দু:খসত্য অনুভব করা যায়। অনেকে মনে করে বসে থাকলে সুখ কিন্তু দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলেও দু:খ্,দীর্ঘ সময় দাঁড়ানো দু:খ, দীর্ঘসময় শোয়াও দু:খ্। এভাবে দেখাযায় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই দু:খ। এসমস্ত দু:খ হতে পরিত্রাণ পাওয়া যায় যদি নিজের অভ্যন্তরীণ শক্তিকে জাগ্রত করে দু:খ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরী করা যায়। সঠিক পদ্ধতিতে কঠোর ধ্যানানুশীলনের মাধ্যমে এই প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরী পূর্বক সকল দু:খকে জয় করে অনাবিল সুখ উপভোগ করা যায়।