প্রজ্ঞাদর্পন ডেক্স
মন খু্বই চঞ্চল। এক মূহুর্ত স্থির থাকে না। মানুষের মন চঞ্চল ও বাধাঁহীনভাবে চলে নিজের অজান্তে। এই না জানাটাই অবিদ্যা। এই অবস্থা থেকে বের হওয়ার জন্য গৌতম বুদ্ধ যে উপায় বাতলে দিয়েছেন তা হল ধ্যান বা ভাবনা। বৌদ্ধশাস্ত্রে চল্লিশ প্রকার শমথ ও এক প্রকার বিদর্শন ধ্যানের কথা উল্লেখ রয়েছে। এর যে কোন একটির মাধ্যমে নিজ চরিত্রানুযায়ী ধ্যান করলে চঞ্চল চিত্তকে সহজেই শান্ত করা যায়। স্থির চিত্ততেই কেবল অনাবিল সুখ উপভোগ করা সম্ভব। চিত্তে যখন শান্ত অবস্থা বিরাজ করে তখন যে কোন কাজও সুচারুরূপে সম্পন্ন করা যায়। ক্রমাগত ধ্যানানুশীলনের ফলে চিত্তেরও ক্রমোন্নতি ঘটতে থাকে। একপর্যায়ে জগতের বাস্তব সত্য মনচিত্তে উদয় হয়।
চার মহাভূত ভাবনা কি?
মানব দেহ তথা গোটা মহাবিশ্বকে গুণগতভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় সকল পদার্থের মধ্যে চারটি উপাদান বিদ্যমান। যথা: পৃথিবী, আপ, তেজ ও বায়ু। মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গাদি এ চার উপাদানে বিভাজন করে ধ্যান করাটা হল চার মহাভূত ভাবনা বা একব্যবস্থান ভাবনা।
কেন করবেন চার মহাভূত ভাবনা?
এটি শমথ যানিক ভাবনা হলেও ধাতু বিশ্লেষনে ভাবনা করা হয় বলে বিদর্শন ভাবনা হিসেবেও গণ্য করা হয়। এই ভাবনা অনুশীলনের মাধ্যমে দেহের প্রকৃত স্বরূপ বোঝা যায়। ফলে-
- সকল জীবের প্রতি মৈত্রীভাব দৃঢ় হয়,
- উদ্বেগ,উৎকণ্ঠা, ভয় দূর হয়,
- কামাসক্ত ব্যক্তি কামাসক্তি সংযত করতে পারে,
- নিজ ও পরদেহের প্রতি আসক্তি কমে যায়,
- নাম-রূপ জ্ঞান উপলদ্ধি করতে সহজ হয়,
- চার আর্যসত্য উপলদ্ধি সহজ হয়,
- প্রতীত্যসমুৎপাত নীতি বুঝতে সক্ষম হয়,
- অনিত্য, দু:খ, অনাত্ম জ্ঞান উৎপন্ন হয়,
- লোভ, দ্বেষ, মোহ দূরীভূত হয়,
- অবিদ্যা দূর করে বিদ্যা উৎপন্ন করা যায়।
এ ভাবনার বিশেষত্ব হচ্ছে কোন আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াও এ ভাবনা যে কোন সময় যে কোন অবস্থাতেই অনুশীলন করা যায়। তবে এর পাশাপাশি আনুষ্ঠানিকভাবে দৈনিক সকাল-বিকাল একঘণ্টা করে দুই ঘণ্টা ধ্যানানুশীলন করলে ভাবনা অধিক ফলপ্রদ হয়। উল্লেখ্য বুদ্ধের সময়ে বিয়াল্লিশ প্রকার ধাতু সমূহ মুখস্ত করতে করতেই অনেকে মার্গফল লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন।
চারমহাভূত ভাবনার অর্ন্তগত ধাতু সমূহ:
মানবদেহে মোট বিয়াল্লিশ প্রকার ধাতু বিদ্যমান। যথা:- কেশ, লোম, নখ, দন্ত, চর্ম, মাংস, স্নায়ু, অস্থি, অস্থিমজ্জা, বৃক্ক(কীডনী), হৃদয়, যকৃত, ক্লোম, প্লীহা, ফুসফস, অন্ত্র, অন্ত্রগুণ, উদর, করীষ(বিষ্ঠা), মস্তলুঙ্গ(মস্তিষ্ক), পিত্ত, শ্লেষ্মা, পূজ, রক্ত, স্বেদ, মেদ, অশ্রু, বসা, খেল(থুথু), সিঙ্গানিকা, লসিকা, মূত্র এবং চার প্রকার অগ্নি ও ছয় প্রকার বায়ু ধাতু।
এ বিয়াল্লিশ প্রকার ধাতুকে চারটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১.পথবী বা পৃথিবী ধাতু: পথবী বা পৃথিবী ধাতু হল পৃথিবী গুণযুক্ত কঠিন ধাতু সমূহ। দেহস্থিত বিশ প্রকার ধাতু পথবী ধাতুর অন্তর্গত।
ত্বক পঞ্চক: কেশ, লোম, নখ, দাঁত, চামড়া।
বৃক্ক পঞ্চক: মাংস, স্নায়ু, অস্থি, অস্থিমজ্জা, বৃক্ক।
ফুসফুস পঞ্চক: হৃদয়, যকৃত, ক্লোম, প্লীহা, ফুসফস।
মস্তলুঙ্গ পঞ্চক: অন্ত্র, অন্ত্রগুণ, উদর, করীষ, মস্তলুঙ্গ।
২.আপ বা পানি ধাতু: দেহস্থিত বার প্রকার তরল জাতীয় পদার্থ সমূহ এ ধাতুর অর্ন্তগত।
মেদছক্কে: পিত্ত, শ্লেষ্মা, পূজ, রক্ত, স্বেদ, মেদ।
মূত্রছক্কে: অশ্রু, বসা, খেল, সিঙ্গানিকা, লসিকা, মূত্র।
৩.বায়ু ধাতু:
৪.অগ্নি ধাতু:
ধাতুসমূহ মুখস্ত করার পদ্ধতি:
প্রথমে চারমহাভূত ভাবনার অন্তর্গত ধাতু সমূহ ভালভাবে মুখস্ত করতে হবে। মুখস্ত হয়ে গেলে পঞ্চক ও ষষ্ঠক সমূহ অনুলোম-বিলোমভাবে বলা অনুশীলন করতে হবে। যেমন:-
১)অনুলোম: কেশ,লোম, নখ, দাঁত, চর্ম
বিলোম: চর্ম, দন্ত, নখ, লোম, কেশ
২)অনুলোম: মাংস, স্নায়ু, অস্থি, অস্থিমজ্জা, বৃক্ক,
বিলোম: বৃক্ক, অস্থিমজ্জা, অস্থি, স্নায়ু, মাংস, চর্ম, দন্ত, নখ, লোম, কেশ।
৩)অনুলোম: হৃদয়, যকৃত, ক্লোম, প্লীহা, ফুসফস।
বিলাম: ফুসফুস, প্লীহা, ক্লোম, যকৃত, হৃদয়, বৃক্ক, অস্থিমজ্জা, অস্থি, স্নায়ু, মাংস, চর্ম, দন্ত, নখ, লোম, কেশ।
৪)অনুলোম: অন্ত্র, অন্ত্রগুণ, উদর, করীষ, মস্তলুঙ্গ।
বিলোম: মস্তলুঙ্গ, করীষ, উদর, অন্ত্রগুণ, অন্ত্র, ফুসফুস, প্লীহা, ক্লোম, যকৃত, হৃদয়, বৃক্ক, অস্থিমজ্জা, অস্থি, স্নায়ু, মাংস, চর্ম, দন্ত, নখ, লোম, কেশ।
৫) অনুলোম: পিত্ত, শ্লেষ্মা, পূজ রক্ত, স্বেদ, মেদ।
বিলোম:মেদ, স্বেদ, রক্ত, পূজ, শ্লেষ্মা, পিত্ত, মস্তলুঙ্গ, করীষ, উদর, অন্ত্রগুণ, অন্ত্র, ফুসফুস, প্লীহা, ক্লোম, যকৃত, হৃদয়, বৃক্ক, অস্থিমজ্জা, অস্থি, স্নায়ু, মাংস, চর্ম, দন্ত, নখ, লোম, কেশ।
৬) অনুলোম: অশ্রু, বসা, খেল, সিঙ্গানিকা, লসিকা, মূত্র।
বিলোম:মূত্র, লসিকা, সিঙ্গানিকা, খেল, বসা, অশ্রু, মেদ, স্বেদ, রক্ত, পূজ, শ্লেষ্মা, পিত্ত, মস্তলুঙ্গ, করীষ, উদর, অন্ত্রগুণ, অন্ত্র, ফুসফুস, প্লীহা, ক্লোম, যকৃত, হৃদয়, বৃক্ক, অস্থিমজ্জা, অস্থি, স্নায়ু, মাংস, চর্ম, দন্ত, নখ, লোম, কেশ।
চলবে.............
পরবর্তীতে ধ্যানের প্রণালী